যৌথ কাব্য থেকে যৌথ জীবনে

Slider জাতীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতি


ঢাকা: সময় ২০১৭। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয় ‘মধুরেণ’ নামে একটি কবিতার বই। কবি গুলতেকিন খান এবং কবি আফতাব আহমেদের যৌথ কাব্যগ্রন্থ। আবেগময় কাব্যের রস আর ছন্দ গ্রন্থটিকে নিয়ে যায় এক অন্য উচ্চতায়। তবে এখান থেকেই শুরু হয় নতুন একটি গল্প। পরস্পরের প্রতি ভালোলাগা। সে ভালোলাগাই ধীরে ধীরে গুলতেকিন-আফতাবকে একে অপরের হাতে হাত রেখে পথচলার সাহস জোগায়। একসময় সব ভাবনার জায়গাগুলো এক করে এক ছাদের নিচে জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নেন তারা।

যৌথ কাব্য থেকে পৌঁছে যান যৌথ জীবনে। গত ২৫শে অক্টোবর ছোট্ট পারিবারিক আয়োজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সাবেক স্ত্রী গুলতেকিন খান ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কবি আফতাব আহমেদ। বিষয়টি কাকতালীয় কি-না কে জানে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন বুধবারই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাউর হয় তাদের বিয়ের কথা। অনেকেই তাদের অভিনন্দন জানান। মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয় তাদের বিয়ের খবর। গতকাল দিনভর চলে গুলতেকিন-আফতাবের বিয়ে নিয়ে সরব আলোচনা।

অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনকে আফতাব আহমেদ বলেন, গুলতেকিনের সঙ্গে বিয়ের খবর গোপন কিছু নয়। তবে বিষয়টি একান্ত ব্যক্তিগত। এই খবরটি অনেকের সম্মানের সাথে জড়িত। সাংবাদিকরা সেটুকু মাথায় রাখলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো। আফতাব আহমেদ বলেন, গুলতেকিন স্ট্যাটাস দিয়েছিল ২৫শে অক্টোবর। লিখেছিল, ‘এবার বাতাস উঠুক, তুফান ছুটুক’। ওটা আমাদের বিয়ের একঘণ্টা পরে দেয়া স্ট্যাটাস। অনেকেই বোঝেননি বিষয়টি। লাইনটা রবীন্দ্রনাথের এবং এরপরই যে লাইন আসে তা হলো, ‘আমাদের যাত্রা হলো শুরু, তোমায় করি নমস্কার’। আর ৫ই নভেম্বর আমি একটি স্ট্যাটাস দিই কীভাবে আমরা এক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সেটি নিয়ে। আর এই সিদ্ধান্ত কিন্তু গত আগস্ট মাসের। দুজনের পরিচয় ও সখ্য নিয়ে আফতাব আহমেদ বলেন, ২০১৩ সালের আগে আমি তাকে চিনতামই না। আমরা দুজনেই ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিলাম। কিন্তু আমি বেশ আগে পাস করে বেরিয়েছি।

গুলতেকিনের লেখাপড়ায় বাধাগ্রস্ততার কারণে আমাদের বিভাগকেন্দ্রিক সাক্ষাৎ হয়নি। এরমধ্যে আমিও নানা কাজে দেশের বাইরে ছিলাম। ২০০৩-০৪ সালে সে যখন নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল তখন সেগুলো আমার কানে এসেছে। কিন্তু সেটা ওই পর্যন্তই। ২০১৩ সালে আমাদের সরাসরি পরিচয় হয়। এরপর দীর্ঘ সময় আমাদের মধ্যে অনেক গল্প ভাগাভাগি হয়। তবে সেসব গল্প পরে কখনও বলবো। এখন নয়। গুলতেকিনের সঙ্গে পথচলার গল্প জানাতে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমরা ২০১৭ সালে মধুরেণ নামে একটি কবিতার বই করেছি দুজনে মিলে। তাম্রলিপি থেকে প্রকাশিত। সেই সময় আমাদের এই একসাথে কাজ একসাথে ভাবার জায়গাগুলো তৈরি হতে থাকে। গুলতেকিন লেখালেখি নিয়ে যতটা সিরিয়াস, আমি ঠিক ততটাই আলসে। ফলে, একরকম জোর করেই আমার কাছ থেকে কাজ বের করেছে সে। তার প্রথম বই আর আমার দ্বিতীয়টি একইসাথে বের হয়।

প্রসঙ্গতঃ ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের তরুণ শিক্ষক হুমায়ূন আহমেদকে কিশোরী গুলতেকিন প্রেমে পড়ে বিয়ে করেছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ ২০০৩ সালে মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলে ভালোবেসে পাতা হুমায়ূন-গুলতেকিন সংসারে বিচ্ছেদ ঘটে। ২০০৫ এ শাওনকে হুমায়ূন বিয়ে করলেও গুলতেকিন আর বিয়ে করেননি। একেবারে আড়ালে চলে যান তিনি। অন্যদিকে আফতাব আহমেদের সঙ্গে তার স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটে ১০ বছর আগে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *