ঢাকা: জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সংসদের বিরোধীদলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গাকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি তাকে জাতীয় পার্টির মহাসচিবের পদ থেকে বহিস্কারেরও দাবী জানিয়েছেন এমপিরা। মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বৈরচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে কটুক্তি ও ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যর জন্য এ দাবি জানানো হয়। তার বক্তব্য নিয়ে গতকাল উত্তপ্ত হয়ে উঠে সংসদ অধিবশেন। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন সরকারদলীয় এমপিরা। এসময় সংসদে তার বিরোধী দলের চিফ হুইপের পদ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। তীব্র ক্ষোভ, উত্তেজনা ও অসন্তোষের মধ্যে দলের পক্ষ থেকে মশিউর রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যের জন্য দুঃখ ও ক্ষমা চেয়ে জাতীয় পার্টির দু’জন সিনিয়র সদস্য দাঁড়িয়ে বলেন, এটি জাতীয় পার্টির নয়, মশিউর রহমান রাঙার একান্তই ব্যক্তিগত বক্তব্য। এর দায় জাতীয় পার্টি নেবে না। তবে তাঁর এই লজ্জাজনক বক্তব্যের কারণে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি, ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
এক পর্যায়ে সরকারি দলের সিনিয়র নেতাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদও মহাসচিব রাঙ্গার কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন। এক সময় যুবদল করে আসা মশিউর রহমান রাঙা কীভাবে জাপা মহাসচিব, সাবেক প্রতিমন্ত্রী হলেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। এ নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক চলার সময় সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও বিতর্ক চলাকালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের নিজ আসন থেকে উঠে গিয়ে অধিবেশনে থাকা সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কিছু সময় কথা বলতে দেখা যায়। তবে অধিবেশনে এ নিয়ে কোন কথা বলেননি জি এম কাদের। মাগরিবের নামাজের বিরতির পর পয়েন্ট অব অর্ডারে অনির্ধারিত এ বিতর্কের সূত্রপাত করেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে কথা বলেন, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ ও মুজিবুল হক চুন্নু। তাঁরা সবাই জাপা মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার কটুক্তিমূলক বক্তব্যের কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি তাঁকে সংসদে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। মশিউর রহমান রাঙা সেই চেষ্টা করেছেন। নুর হোসেন যখন হত্যা হয়, তখন দেশে ফেনসিডিল ইয়াবা ছিল না। ভোট ডাকাতি, মিডিয়া ক্যু’র কথা বলা হয়। এই ভোট ডাকাতি-মিডিয়া ক্যু’র মূল হোতা ছিলেন প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। আজ সেটাকে ঢাকার জন্য রাঙা এত বড় দুঃসাহস দেখাতে পারেন না। তিনি বলেন, এরশাদের সময় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নির্যাতন ও পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরশাদকে শুধু আওয়ামী লীগ স্বৈরাচার বলে না, সারাদেশের মানুষ তাকে স্বৈরাচার বলে অভিহিত করেছে। সারাবিশ্বে এরশাদ স্বৈরাচার বলে পরিচিত। তাই জাপা মহাসচিব রাঙাকে অবশ্যই তাঁর কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।
তোফায়েল আহমেদও মশিউর রহমান রাঙাকে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মশিউর রহমান রাঙা এমন একটি বক্তব্য দিয়েছেন, তা বাংলার মানুষের হৃদয়ে আঘাত লেগেছে। নূর হোসেন হত্যার পর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বেগবান হয়, দেশের মানুষ রুখে দাঁড়ায়। অথচ রাঙা সাহেব ভুলে গেছেন, এরশাদ সাহেব নুর হোসেনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মা-বাবার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন, সংসদে ক্ষমা চেয়েছিলেন। অথচ রাঙা শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে ত্চ্ছু-তাচ্ছিল করেছেন। এই বক্তব্যের জন্য তাকে ধিক্কার জানাই। তিনি বলেন, মশিউর রহমান রাঙার এমন বক্তব্যের কারণে সারাদেশে স্বৈরাচার শব্দটি উচ্চারণ হচ্ছে, তার কুশপুত্তলিকা দাহ হচ্ছে। তাই রাঙা যে বক্তব্য দিয়েছে সেজন্য অবশ্যই তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, মশিউর রহমান রাঙা যে কথা বলেছে, এটা কোনো সুস্থ্য মানুষ বলতে পারে না। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কথা বলার আগে তাকে চিন্তা করা দরকার ছিল। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পাকিস্তানি আর্মির সঙ্গে একত্রিত হয়ে পাকিস্তানের স্বার্থে কাজ করেছেন। রাঙার এই বক্তব্য গণতন্ত্রের উপর আঘাত। মশিউর রহমান রাঙাকে শুধু ক্ষমা চাইলেই হবে না। জাতীয় পার্টিকে তার এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হবে। ক্ষমা তো তাকে চাইতেই হবে, তা না হলে গণতন্ত্রের জন্য ক্ষত থেকে যাবে। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, শহীদ নুর হোসেনকে নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলেছেন মশিউর রহমান রাঙা। কথায় আছে ’রতনে রতন চেনে….’। আমি বাকি কথাটা আর বললাম না। যে নুর হোসেনকে সামনে রেখে আমরা আন্দোলন করেছি, তাকে তিনি কটাক্ষ করেছেন। এটা করে তিনি সংসদকে অপমান করেছেন। কারণ স্বৈরাচারের পতন না হলে রাঙা সাহেব সংসদে এসে বসতে পারতেন না।