ঢাকা: ধেয়ে আসছে প্রবল শক্তিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে আগামীকাল শনিবার রাতে অথবা রোববার সকালে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানতে পারে বুলবুল। নাম শুনে সুমধুর মনে হলেও বুলবুল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবন দুর্বিসহ করে তুলতে পারে। গত বুধবার রাতে এটা গভীর নি¤œচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় বুলবুল পূর্ব-মধ্য-বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছিল। এটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৮২০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করলেও মংলা থেকে ৭৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
এ ছাড়া কক্সবাজার থেকে ৭৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে বাংলাদেশে তিন সমুদ্রবন্দর, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা অথবা ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার আগেও তিন সমুদ্রবন্দরে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সঙ্কেত জারি করলেও সন্ধ্যার পর ২ নম্বর দূরবর্তী সঙ্কেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সঙ্কেত জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে বুলবুল আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
উল্লেখ্য, অতীতে নভেম্বর মাসেই দু’টি প্রচণ্ড শক্তিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনে বিপর্যস্ত করে যায় বাংলাদেশকে। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ভয়াল ‘ভোলা ঝড়’ এবং ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডর এমনই শক্তিশালী দু’টি ঘূর্ণিঝড় ছিল। ভোলা ঝড়ে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং সিডরে প্রাণহানি তুলনামূলক কম হলেও দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক এলাকার ক্ষতি হয়।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কেন্দ্রে ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বিশাল গতিবেগ থাকলেও এটি সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ঘণ্টায় মাত্র ৭ কিলোমিটার গতিতে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস ঘূর্ণিঝড়টি আরো ঘনীভূত হতে পারে বললেও আন্তর্জাতিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেন্দ্রগুলো আরো তিন দিন আগে থেকে পূর্বাভাস দিয়ে আসছে যে, এটা ঘূর্ণিঝড় হবে এবং সম্ভাব্য গতিপথ হিসেবে ভারতের উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। গত বুধবার থেকে এসব আবহাওয়া কেন্দ্র স্পষ্ট করে গতিপথ অঙ্কন করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় উঠে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে।
কানাডা থেকে আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি শেষ পর্যন্ত খুলনা, সাতক্ষীরা এবং পটুয়াখালী এলাকায় আঘাত হানতে পারে।
বুলবুলের প্রভাবে গতকাল সারা দেশের আকাশ মেঘলা ছিল। গতকাল কোথাও বৃষ্টি না হলেও আজ শুক্রবার ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্য চার বিভাগে বৃষ্টি না হলেও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে এবং শুষ্ক থাকবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। বৃষ্টির কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সারা দেশে না হলেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভারী বর্ষণে শীতকালীন ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। ইতোমধ্যে বাজারে শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করলেও দাম কমেনি। এ অবস্থায় বৃষ্টিপাতের কারণে ফসল নষ্ট হলে শীতকালীন সবজির দামে তা প্রভাব ফেলতে পারে।
কৃষি আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়েছে, ‘শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ স্থানে মাঝারি ধরনের ভারী (প্রতিদিন ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার) থেকে ভারী (প্রতিদিন ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক স্থানে এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দুই-এক স্থানে হালকা (প্রতিদিন ৪ থেকে ১০ মিলিমিটার) থেকে মাঝারি (প্রতিদিন ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার) ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’ প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে অগ্রসর হলেও শেষ পর্যন্ত উপকূলে ওঠার আগেই বুলবুল দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। সেই সাথে আবহাওয়া অফিস থেকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।