নিউইয়র্ক ও ঢাকা: নিউইয়র্কের জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে অবিভক্ত ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে তাঁর পরিবার ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
খোকার পরিবার ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আজ সোমবার নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বাদ আসর সাদেক হোসেন খোকার নামাজে জানাজার পর যত দ্রুত সম্ভব তার মরদেহ ঢাকার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হবে।
বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার বড় ছেলে ইশরাক হোসেন ফেসবুকের মাধ্যমে জানিয়েছেন, নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় রোববার রাত ২টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সোমবার দুপুর ১টা ৫০) তার বাবার মৃত্যু হয়।
নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারের তার চিকিৎসা চলছিল। শেষ পর্যায়ে চিকিৎসকরা তার আশা ছেড়েও দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন পরিবার ও স্বজনেরা। মৃত্যুর সময় খোকার স্ত্রী ইসমত হোসেন, ছেলে ইশরাক হোসেন ও ইশফাক এবং মেয়ে শারিকাসহ স্বজনরা নিউ ইয়র্কের ওই হাসপাতালেই ছিলেন।
সাদেক হোসেন খোকার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর পরই হাসপাতালে ভিড় জমান যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও কমিউনিটির বিশিষ্টজনদের অনেকে। এ ছাড়া তার কিছু সময় আগে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানসহ দলের কয়েকজন নেতা ঢাকার সাবেক মেয়রকে দেখতে হাসপাতালে যান। এই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন নিউইয়র্কের নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।
চিকিৎসার জন্য পর্যটক ভিসায় সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন খোকা। পরে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত তা মঞ্জুর হয়নি।
ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, মৃত্যুর আগে সাদেক হোসেন খোকা ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মারা গেলে যেন দেশে নিয়ে তাকে দাফন করা হয়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এরইমধ্যে জানিয়েছেন, নিউইয়র্কে সাদেক হোসেন খোকার পরিবার ট্রাভেল পারমিট এর জন্য আবেদন করলে বাংলাদেশ কনস্যুলেট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা কালের কণ্ঠকে বলেছেন, সাদেক হোসেন খোকা ও তার পরিবারের বিষয়ে সরকার যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, সেভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকার সাবেক মেয়র ও মন্ত্রী সাদেক হোসেন খোকা ২০১৪ সালের ১৪ মে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আসেন। সেই থেকে তার চিকিৎসা চলছে। সপ্তাহ তিনেক আগে মুখে ঘা দেখা দিলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ১৮ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি করার কয়েকদিন পর ৬৭ বছর বয়সি সাদেক হোসেন খোকার শ্বাসনালী থেকে টিউমার সরিয়ে ফেলা হয়। শেষের দিকে বেশিরভাগ সময় অচেতন অবস্থায় ছিলেন তিনি।
এদিকে পরিবার ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বাদ আছর সাদেক হোসেন খোকার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব তার মরদেহ ঢাকার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হবে।
জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হবে খোকাকে
যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। বাংলাদেশ সময় সোমবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান।
সাদেক হোসেন খোকার শ্যালক শফিউল আজম খান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর মৃতদেহ ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সাদেক হোসেন খোকার ইচ্ছা অনুযায়ী জুরাইন কবরস্থানে তাকে তাঁর বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে।
তিনি উল্লেখ করেছেন, দুই বছর আগে সাদেক হোসেন খোকার বাংলাদেশ পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হবার পর, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ দূতাবাসে তিনি মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেও জবাব পাননি।
এখন তাঁর মৃতদেহ ঢাকায় নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রয়োজন।
শফিউল আজম খান জানিয়েছেন, তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসে ট্রাভেল ডকুমেন্টের জন্য ইতিমধ্যে আবেদন করেছেন।
সেই কাগজ হাতে পাবার পরই তাঁর মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার সময়ক্ষণ পরিবার ঠিক করবেন।
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মিঃ খোকা নিউ ইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়েন ক্যাটারিং ক্যান্সার ইন্সটিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সাদেক হোসেন খোকা ১৯৫২ সালের ১২ই মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
১৯৯১ সালে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০২ সালে তিনি ঢাকার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন অবিভক্ত ঢাকার শেষ নির্বাচিত মেয়র।
২০০৮ সালে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা করে দুদক। এরপর ২০১২ সালে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন সাদেক হোসেন খোকা।
পরের বছর ২০১৫ সালে দুর্নীতির মামলায় তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার একটি আদালত। সর্বশেষ সাদেক হোসেন খোকার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলেও সরকার তা নবায়ন করেনি।