ঢাকা: রাষ্ট্রীয়ভাবে ৪ নভেম্বরকে ‘সংবিধান দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা জাতীয় কমিটি। সংগঠনটির পক্ষ থেকে সংবিধান সংক্রান্ত পাঁচটি দাবিতে আজ সোমবার (৪ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি জানানো হয়, চার নভেম্বরকে রাষ্ট্রীয় দিবস ঘোষণা করে দিবসটিকে যথাযথ মর্যাদায় দেশব্যাপী পালন করতে হবে। উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করা হয়েছিল বাংলাদেশের সংবিধান। আর কার্যকর হয় একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে।
বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব বদিউর রহমান সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তাদের অন্য চারটি দাবি হলো, বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্র পরিচালনায় রাষ্ট্রীয় চার নীতির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা, সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ধর্মভিত্তিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতি ও মর্যাদা নিশ্চিত করা।
সংগঠনের আহ্বায়ক কামাল লোহানী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গণপরিষদে রাষ্ট্রীয় যে চারটি মূলনীতি- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা গ্রহণ করা হয়েছিল তা থেকে দেশ আজ দূরে সরে গেছে। তিনি বলেন, সামরিক শাসকের ক্ষমতায় এসে মূলনীতিই পরিবর্তন করে ফেলেছিল। এখন বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে ৭২-এর মূলনীতিগুলো সংবিধানে ফিরে এসেছে। কিন্তু মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক অনেক বিষয় সংবিধানে থেকে গেছে। এটি প্রত্যাশিত নয়। এ কারণেই আমরা বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে কামাল লোহানী বলেন, ২০১১ সাল থেকে আমরা এই আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু এসব দাবি বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলা হয়নি। আগামী দিনে এই বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করা হবে।
লিখিত বক্তব্যে বদিউর রহমান বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সংবিধানের পঞ্চম ও অষ্টম সংশোধনী বে-আইনি ঘোষণা দিয়ে বাতিল করেছে। এর মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার সুযোগ এসেছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো বেশিরভাগ বিষয়ে আমাদের সংবিধান বাহাত্তরের আদর্শকে ধারণ করলেও দু-একটি বিতর্কিত বিষয় থেকে গেছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা লাখো বাধা উপেক্ষা করে এদেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীতের বিচার সম্পন্ন করছেন। কিন্তু তাঁর সরকার কেন বাহাত্তরের সংবিধানের ধারায় পুরোপুরি ফিরতে পারল না- তা জাতির কাছে বড় প্রশ্ন।
১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে চুড়ান্তভাবে সংবিধান গ্রহণের দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘শাসনতন্ত্রের যে মৌলিক নীতির উপর ভিত্তি করে আইন হয়, সেই মৌলিক নীতির ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে অ্যাসেম্বলিতে (সংসদে) আইন পাস হবে। এই মৌলিক নীতির বিরুদ্ধে কোনো আইন হতে পারবে না।’
জাতির পিতার এই উদ্বৃতি দিয়ে বদিউর রহমান বলেন, ‘মৌলিক নীতিবিরোধী অনুচ্ছেদ খোদ সংবিধানেই রয়ে গেছে। তাই আমাদের দাবি এসব অসঙ্গতি দূর করে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় পরিচালিত করতে হবে। ধর্মীয় কোনো গোড়ামিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।’