গ্রাম বাংলা ডেস্ক: কলকাতায় আটক হওয়া নারায়ণগঞ্জের সাতখুন হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নুর হোসেনকে আটদিনের পুলিশ রিমান্ডে দিয়েছে আদালত ।
বিবিসি বাংলা জানায়, ধৃত নূর হোসেন ও তাঁর দুজন সঙ্গী – ওহিদুজ্জামান সালিম ওরফে সালিম এবং সুমন খান ওরফে বিট্টুকে গ্রেপ্তার করার পর রাতে বাগুইআটি থানার লক আপ থেকে প্রথমে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায় পুলিশ, তারপর বেলা বারোটার দিকে আদালতে রওনা করা হয় – কোমরে দড়ি বেঁধে।
আদলতে যাওয়ার সময়ে নূর হোসেন মন্তব্য করেন যে তাঁকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ বারো দিনের হেফাজত চেয়েছিল, কিন্তু বিচারক আট দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
ধৃতদের পক্ষে কোনও আইনজীবী আজ নিয়োগ করা হয় নি, তবে একজন আইনজীবি বিবিসি-কে জানিয়েছেন যে তাঁর সঙ্গে ধৃতদের পক্ষে মামলা লড়ার জন্য যোগাযোগ করেছিলেন দুজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি – কিন্তু চূড়ান্ত ভাবে তাঁকে নিয়োগ করা হয় নি – তাই আজ কেউই নূর হোসেনদের হয়ে দাঁড়ান নি।
পরে পুলিশ সবার অলক্ষ্যে ধৃত তিনজনকে আদালত থেকে বার করে নিয়ে যায়।
আদালতে নূর হোসেন আর তাঁর দুই সঙ্গীর বিরুদ্ধে একটাই অভিযোগ – তারা বসিরহাট এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছেন – কোনও ভিসা ছাড়াই। তাই বিদেশী আইনের ১৪ নম্বর ধারাতেই অভিযোগ করা হয়েছে।
যেহেতু ভারতে তাঁরা কোনও অপরাধ করেন নি – তাই নারায়নগঞ্জের সাত খুনের মামলার উল্লেখ করা হয় নি এফ আই আরে। কিন্তু এফ আই আরে এটা বলেছে পুলিশ যে ধৃতদের আরও কয়েকজন সহযোগীর খোঁজ পাওয়ার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় তারা।
পুলিশ ইতোমধ্যেই জেরা করছে ধৃতদের। যেহেতু ইন্টার পোলের নোটিশ রয়েছে, তাই পুলিশের বিভিন্ন শাখা জেরা চালাবে।সন্ত্রাস দমন শাখা ইতিমধ্যেই জেরা শুরু করেছে আর গোয়েন্দা বিভাগও জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
যে সিজার লিস্ট আদালতে পেশ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ৫টি মোবাইল ফোন আর এগারোটি সিম কার্ড – যার একটি বাংলাদেশের সিম-ও আছে।
সেই সব কল লিস্ট খতিয়ে দেখা হবে যে কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন ধৃতেরা। তবে কোনও অস্ত্র আটক করা হয় নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে পুলিশ বলছে ইন্টারপোল নোটিশ থাকা কোনও ব্যক্তির প্রত্যার্পনটা যে ঠিক কীভাবে হবে, সেটা সম্বন্ধে তাঁরা নিশ্চিত নন।
তবে যেহেতু ভারতের আদালতে তাঁদের পেশ করা হয়েছে আর বাংলাদেশের তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাই নিয়ম অনুযায়ী রাজ্য পুলিশের সি আই ডি বিষয়টি ভারতে ইন্টারপোলের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা সি বি আইকে জানাবে।
এরপরে বাংলাদেশের পুলিশকে ইন্টারপোল জানাবে যে ওই ব্যক্তি ধরা পড়েছে। তারপর বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের মাধ্যমে নূর হোসেনকে ফেরত চাইবে ।
শেষমেশ পশ্চিমবঙ্গের আদালতের কাছে বাংলাদেশ সরকারের সেই আর্জি পেশ করবে – তাদের অপরাধের ব্যাপারে বিস্তারিত বলা হবে।
কিন্তু ততদিন পর্যন্ত অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের যে মামলা চলছে, সেটা চলতে থাকবে, আর হয়তো শাস্তিও ভোগ করতে হবে ধৃতদের।
এদিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন কলকাতায় আটক হওয়া নুর হোসেনের পরিচয় নিশ্চিত হবার পর তাকে সেখান থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হবে । গতকাল কলকাতায় নূর হোসেনকে আটকের পর রবিবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন , “যে নূর হোসেনকে আটক করা হয়েছে তিনিই সেই নূর হোসেন কিনা এসব বিষয়ে কনফার্ম হয়ে আমারা শিঘ্রই ব্যবস্থা নেব । ”
ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জনান গ্রেফতারকৃতদের ব্যাপারে সব তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে আদান-প্রদানের পরই তাদের ফিরিয়ে আনা হবে ।
কলকাতা পুলিশ বলছে শুক্রবার তারা গোপন সূত্রে খবর পায় যে নারায়নগঞ্জের সাত খুনের অভিযুক্তরা বিমানবন্দর লাগোয়া কৈখালী এলাকার একটি ফ্ল্যাটবাড়ীতে থাকছে।
পাঁচতলার ৫০৩ নম্বর ফ্ল্যাটটিতে যে অভিযুক্তরা আছেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরে শনিবার দুপুর বারোট নাগাদ সাত জন সাদা পোষাকের পুলিশের একটি দল ইন্দ্রপ্রস্থ নামের ওই আবাসনে যান।
তারপরে সন্ধ্যায় তিন গাড়ি পুলিশ যায় এবং শেষমেশ রাত নটা নাগাদ ধৃতদের আটক করে বাগুইআটি থানায় নিয়ে আসা হয়। প্রথমে নূর হোসেনের পরিচয় সম্বন্ধে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারছিল না, কিন্তু ভোর রাতের দিকে বোঝা যায় যে ধৃতেরাই নারায়নগঞ্জ সাতখুনের অভিযুক্ত।