গাজীপুর অফিস: ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এর আগে এই চার জাতীয় নেতাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
এই চার জাতীয় নেতার মধ্যে বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের গ্রামে। বঙ্গতাজের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি গাজীপুর-৪(কাপাসিয়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। বঙ্গতাজের ছেলে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বঙ্গতাজের ভাই এডভোকেট মোঃ আফছার উদ্দিন আহমদ খান সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক গৃহায়ন ও গনপূর্ত প্রতিমন্ত্রী। শহীদ বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমদের স্ত্রী সৈয়দা জহুরা তাজউদ্দিন ছিলেন আওয়ামীলীগের দুঃসময়ের সভাপতি।
বর্তমান সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর-১(কালিয়াকৈর) আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। আজকের জেলা হত্যা দিবসে গাজীপুর থেকে নেতৃবৃন্ধ ঢাকার বনানীতে চার জাতীয় নেতার কবর জিয়ারত করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের নিজ জেলা গাজীপুরের জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে কোন কর্মসূচি দেখা যায় নি। আজ ৩ নভেম্বর দুপুর ২টায় গাজীপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় কেউ নেই। কার্যালয় সংলগ্ন স্থায়ী মঞ্চের সামনে বেবিটেক্সির ষ্ট্যান্ড। খালি মঞ্চের ছবি তোলতে দেখে দৌঁড়ে এলেন ষ্ট্যান্ডের সিরিয়াল মাষ্টার ও কয়েকজন বেবিটেক্সি চালক। তারা জানালেন, এই খানে বেবিটেক্সি ষ্ট্যান্ড। মঞ্চে কোন অনুষ্ঠান হলে কিছু সময়ের জন্য গাড়ি সরিয়ে নেয়া হয়।
বঙ্গতাজ তাজউদ্দিনের নিজ জেলা গাজীপুরে জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে কোন কর্মসূচি নেই কেন? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি কেউ। এ বিষয়ে জেলা ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল তেমন কোন নেতা কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মুজিবুর রহমান বলেছেন, দলীয় কার্যালয়ে সকাল ১১টায় দোয়া মাহফিল হয়েছে।
এদিকে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয়ভাবে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সর্বত্র দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন এবং কালো ব্যাজ ধারণ। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জমায়েত এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে জাতীয় চার নেতার কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত। একইভাবে রাজশাহীতে জাতীয় নেতা কামারুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত। এ ছাড়াও এ দিন বিকাল ৩টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে মিলনায়তনে (খামারবাড়ি, ফার্মগেইট) আলোচনা সভা। স্মরণ সভার সভাপতি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
তাজউদ্দীন আহমদের পরিচিতি:
তাজউদ্দীন আহমদ ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৌলভী মোঃ ইয়াসিন খান এবং মাতা মেহেরুননেসা খান।
তার স্ত্রী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তাদের ৪ সন্তান রয়েছে।[১] বড় মেয়ে শারমিন আহমদ রিপি; মেজো মেয়ে বিশিষ্ট লেখিকা ও কলামিস্ট এবং গাজীপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি এবং কনিষ্ঠা মেয়ে মাহজাবিন আহমদ মিমি। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ গাজীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে আসীন অবস্থায় পদত্যাগ করেন ও ৭ জুলাই, ২০১২ইং তারিখে তার আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদ ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৌলভী মোঃ ইয়াসিন খান এবং মাতা মেহেরুননেসা খান।
জাতি আজ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতাকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের অন্যতম বর্বরোচিত এই কালো অধ্যায়টিকে স্মরণ করছে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের উদ্যোগে সারাদেশে পালিত হয় শোকাবহ এই দিবস।
গাজীপুরবাসীর দাবী, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নিজ জেলায় মাস ব্যাপী না হলেও দিন ব্যাপাী নানা কর্মসূচি পালন করা উচিত। ওই সকল কর্মসূচিতে শহীদ বঙ্গতাজ তাজউদ্দীর আহমদকে যথাযথভাবে উপস্থাপন না করতে পারলে জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আমহদকে সঠিকভাবে চিনতেও হয়ত পারবে না।