ঢাকা: নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল জয়ের পর থেকেই দলের বিভিন্ন স্তরে শুরু হয় ব্যক্তিকেন্দ্রিক দলভারি করার প্রবণতা। কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী-এমপিরা নিজ বলয় ভারি করতে ‘ফুলের তোড়ায়’ বরণ করে নেন বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাদের। যাদের অনেকের বিরুদ্ধে ছিল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী হত্যাসহ নাশকতা ও অবৈধ অস্ত্রের একাধিক মামলা। দল বদল করে আওয়ামী লীগে এসে রাতারাতি পুনর্বাসিত হয়েছেন তারা। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধীও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীরা এখন জেলা-উপজেলায় চালকের আসনেও বসেছেন। ‘অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে নয়’ দলের হাইকমান্ডের এমন নির্দেশনা থাকলেও তোয়াক্কা করেননি মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা। গত পৌনে ১১ বছরে কমপক্ষে অর্ধলক্ষাধিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে আওয়ামী লীগে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের ব্যাপক অনুসন্ধানে দুই থেকে আড়াইশ নেতার নাম এসেছে যারা বিএনপি, জামায়াত-শিবির এবং ফ্রীডম পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই ‘পরশ পাথরের’ ছোঁয়ায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি পেয়েছেন। কেউ কেউ উপজেলা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রও হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর প্রতীক নৌকা নিয়ে। তারাই এখন ছড়ি ঘুরাচ্ছেন জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়নে। পরিস্থিতি এমন যে কোথাও কোথাও নব্য আওয়ামী লীগারদের হাতে আওয়ামী লীগ বা তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মার খাচ্ছেন, অপমান-অপদস্ত হচ্ছেন। তাদের পক্ষে এখন আওয়ামী লীগ করাই দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপি ও জামায়াত-শিবির ছেড়ে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে। আর এই অনুপ্রবেশ স্রোতের আকার ধারণ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন পূর্ব ও পরবর্তী চারদলীয় জোটের সহিংস আন্দোলন দমে যাওয়ার পর থেকে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে এখন বিএনপি-জামায়াত খুঁজে পাওয়া ভার। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এবার টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় পর্যায়ে যেন সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। যাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘কাউয়া’ এবং ‘হাইব্রিড’ নামে অভিহিত করে আলোচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে বাস্তবতা এমন যে এসব নব্য আওয়ামী লীগারদের দাপটে সারা দেশে মূল স্রোতের আওয়ামী লীগাররাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা, জামালপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বিএনপি-জমায়াতের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগে বেশি যোগদান করেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করার নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো তালিকা করা হয়নি। জেলা-উপজেলার নেতারাও কেন্দ্রে কোনো তালিকা জমা দেননি। বাধ্য হয়ে দলীয় সভানেত্রী নিজের তত্ত্বাবধানে পাঁচ হাজার অনুপ্রবেশকারীর তালিকা করে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতে দিয়েছেন। ফলে টনক নড়েছে দায়িত্বপ্রাপ্তদের।
জামায়াত-শিবির ও বিএনপি নেতাদের নিয়ে যেসব কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি-মন্ত্রী বেশি সমালোচনা করছেন তাদের অনেকের হাত ধরেই অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের দীর্ঘ অনুসন্ধানে গত পৌনে ১১ বছরে বিএনপি, জামায়াত-শিবির ও ফ্রীডম পার্টি থেকে যারা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই পদ-পদবি পেয়েছেন তাদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তুলে ধরা হলো।
ফ্রীডম পার্টির ক্যাডার ও বঙ্গবন্ধুর খুনি বজলুল হুদার দেহরক্ষী এনামুল হক এখন মেহেরপুর জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি। অ্যাডভোকেট এস এম হায়দার আলী ফ্রীডম পার্টির খুলনা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ১৯৮৮ সালে সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি) আসন থেকে ফ্রীডম পার্টির হয়ে নির্বাচন করেন। সেই হায়দার আলী এখন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোর্ট পৌর জামায়াতের আমির মনিরুজ্জামান প্রথমে বিএনপিতে যোগ দিয়ে কোষাধ্যক্ষ পদ পান। এরপর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই হয়ে যান পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি। বাগমারা উপজেলা ও পশ্চিম জেলা শিবির সভাপতি বাংলাভাইয়ের সহযোগী মোল্লা এম আলতাফ হোসেন এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। পুটিয়া জামায়াতের রোকন আরিফ হোসেন এখন উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি। উপজেলা জামায়াতের সদস্য মজিবর রহমান উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা শিবিরের সভাপতি মোস্তফা কামাল এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক। রাজশাহীর বাগমারার দয়ারামপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি আলী আকবর বর্তমানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। শিবিরের সাথী ছিলেন আকরামুল হোসেন। সে বর্তমানে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক। শেরপুর সরকারি কলেজের শিবির মনোনীত জি এস আবদুর রাজ্জাক এখন জেলা ওলামা লীগের সভাপতি। জেলা শিবিরের সেক্রেটারি সুরুজ্জামান ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। জেলা জামায়াতের রোকন নবী হোসেন ওলামা লীগের সহ-সভাপতি।
আবদুল মজিদ মাস্টার ছিলেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই বাগিয়ে নিয়েছেন কাকনহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ। একই সঙ্গে নৌকা নিয়ে তিনি কাকনহাট পৌর মেয়রও নির্বাচিত হয়েছেন। একই উপজেলার যুবদলের সভাপতি রবিউল আলম এখন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। শেরপুর শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগে ভিড়েই পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ। উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনোয়ার খান এখন আওয়ামী লীগের সদস্য।
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের বাইশগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার বাবা ছিলেন শান্তি কমিটির সেক্রেটারি। একই ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন এখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। লাকসাম উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুল মান্নান এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। নওয়াব ফয়জুন্নেছা কলেজের শিবিরের একাদশ শ্রেণির সভাপতি আবদুল আলীম দিদার পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য। বাকই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল আউয়াল এখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। লাকসাম পূর্ব ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল্লাহ মজুমদার এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুর রহমান এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক। বটতলী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক। উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শাহজাহান মজুমদার এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দলীয় চেয়ারম্যান। উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি জালাল আহমেদ এখন আওয়ামী লীগ উপজেলা সদস্য, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জহিরুল হুদা মজুমদার এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। বিএনপির সাবেক এমপি গফুর ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী এখন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ফ্রীডম পার্টির সাবেক নেতা এম এ রহমান নেভী ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থনে পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। সদর দক্ষিণের বৃহত্তর পেরুল ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ডালিম বর্তমানে পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বিএনপির রাজনীতি করা রুহুল আমীন চৌধুরী এখন সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। লালমাই উপজেলার বৃহত্তর বাগমারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বর্তমানে বাগমারা উত্তর ইউপি আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ও লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা পৌর বিএনপির অর্থ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম এখন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। ধানখোলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রুহুল আমিন এখন গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। মাকসুদুর রহমান আনসারী ছিলেন জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। একই উপজেলার জুবায়দুর রহমান বিএসসি উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল সালাম আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে চিনাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন নৌকা নিয়ে। মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ছিলেন শহর ছাত্রদল নেতা। এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
মো. ইসহাক রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আওয়ামী লীগে যোগদান করলেও এখনো পদ-পদবি পাননি। জামায়াত নেতা জাহিদুল ইসলাম ও বাগমারা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। আগামী সম্মেলনে পদের আশায় রয়েছেন। মোহনপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা রুস্তম আলী ও কামরুজ্জামান রানা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। জাতীয় পার্টির সাবেক সদস্য রোকনুজ্জামান টিটু কেশরহাট পৌর যুবলীগের সভাপতি। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার জাতীয় পার্টির সাবেক সদস্য, পরবর্তীতে এলডিপিতে যোগদানকৃত মো. আফজাল হোসেন উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি। উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এখন স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক। গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল হক লিটু বর্তমানে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ফুকু এখন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা। শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোকলেচুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। সোহেল রানা এক সময়ে দাপুটে বিএনপি হলেও এখন জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক। নিশাত সিকদার এক সময় বিএনপির নেতা ছিলেন। এখন শ্রীনগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ও হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সিরাজদিখানের শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহের ভাই বিএনপির আমজাদ হোসেনকে শেখরনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছে। এক সময়ে বিএনপির দাপুটে নেতা লুৎফরকে কুমারভোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিএনপি নেত্রী গুলশান আরা বেগম এখন জেলা কৃষক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সম্পাদকম-লীর সদস্য। একই উপজেলার ছাত্রশিবির নেতা সুলতান রায়হান ভূঁইয়া রিপন জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের কার্যকরী নেতা। ছাত্রদল নেতা এখলাছ উদ্দিন পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হয়েছেন। করিমগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদল নেতা শিল্পপতি এরশাদ জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদ্য বিদায়ী কমিটির সহ-সভাপতি। ইটনা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান সোহেল বর্তমানে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। মিঠামইনের বিএনপি নেতা কামাল হোসেন চৌধুরী বর্তমানে জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য আমজাদ হোসেন খান দিদার এখন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক। মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত (পলাতক অবস্থায় মৃত্যু) আবদুল মান্নানের নাতি নূর মোহাম্মদ বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রচার সম্পাদক। বাজিতপুরের বিএনপির কর্মী রাজন মিয়া উপজেলার হালিমপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি। যুবদলের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত মো. জুয়েল হালিমপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি। আরেক বিএনপি কর্মী ইলিয়াস মিয়া এখন ওই ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি। যুবদল কর্মী শহীদুল ইসলাম হালিমপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। ইউনিয়ন বিএনপির নেতা কামাল উদ্দিন বাচ্চু হালিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ছাত্রদল কর্মী আবুল হাসান এখন হালিমপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি।
বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের শিবির কর্মী জিয়াউল হক ঝিনুক এখন ওই ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন সহিংস আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জুবায়ের ইব্রাহীম এখন পিরিজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের হর্তাকর্তা। এক সময়ের ফ্রীডম পার্টির নেতা ও পরে পিরিজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন মেন্দু এখন ওই ইউনিয়নের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা। বিএনপির সদস্য ডা. মিজানুর রহমান এখন ভৈরব আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক। ইটনা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান সোহেল এখন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। বিএনপির কামাল হোসেন চৌধুরী জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য আকরামুল ইসলাম আক্কু বিহারী ছিলেন বিএনপির সদস্য। ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়েই পেয়েছেন জেলা শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদকের পদ। জেলা তাঁতী দলের সভাপতি মাসুদুর রহমান এখন আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক। মাধনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। লালপুর উপজেলা জামায়াতের সদস্য বিত্তবান আমজাদ হোসেনকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। রতন সাহা এক সময় বিএনপির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এখন নলডাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মাহবুবুল হক বাচ্চু এখন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি জহুরুল হক লাড্ডু পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। লালপুরের জামায়াতের কর্মী লালপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। জাতীয় পার্টির সদস্য নাসির এখন সিংড়ার কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। জামায়াতের কট্টর সমর্থক একরামুল হক শুভ লালোর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। চৌগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ফারুক হোসেন এখন ওই ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি। সিংড়া পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আবদুল আউয়াল এখন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি। সুকাশ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য এখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সাবেক শিবির কর্মী তানভির রহমান এখন নলডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
সাতক্ষীরার সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ওরফে বাবু সানা দল বদল করে আওয়ামী লীগে এসেছেন। দল বদল হলেও পদ বদলায়নি। তিনি ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কৃত ওয়ার্কার্স পার্টির তালা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক এখন জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। ডা. হাদীউজ্জামান হাদী ছিলেন জামায়াতের সক্রিয় কর্মী। এখন তিনি তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক। আনিসুর রহমান খোকন ছিলেন কালিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। আওয়ামী লীগে যোগদান করেই ওই ইউনিয়নের সভাপতি হয়েছেন। তোষিকে কাইফু ছিলেন আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এখন তিনি উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। জামায়াতের সাবেক সক্রিয় কর্মী ও জামায়াতের সাবেক এমপি রাজাকার খালেকের ডান হাত হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদ সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক।
হাবিবুর রহমান দুলাল ছিলেন দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি। তিনি এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রবিউল ইসলাম চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে পেয়েছেন সহ-সভাপতির দায়িত্ব। ইসহাক আলী ছিলেন পৌর বিএনপির সদস্য। তিনি এখন পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। খানসামা উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদুজ্জামান শাহ এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। বোচাগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি জাকিউর রহমান পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য। বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য গোপাল দেব শর্মা এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বীরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান জুয়েল এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য সম্পাদক। পৌর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। চিরিরবন্দরের আবদুলপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি এখন উপজেলা ওলামা লীগের সভাপতি। বিরল উপজেলা বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান এখন উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি। উপজেলা বিএনপির সদস্য জিল্লুর রহমান এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা আমজাদ হোসেন স্বপন এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। কালিয়াকৈর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহাব মিয়া পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। উপজেলা জাতীয় পার্টির আরেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেন চৌধুরী বাবু পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। টঙ্গী থানা যুব সংহতির সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন মনি সরকার এখন টঙ্গী থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। নোয়াখালী জেলা জাসদের সভাপতি মিয়া মো. শাহজাহান এখন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ আবুল কালাম আজাদ ৮ বছর আগে হবিরবাড়ি ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। উপজেলা হবিরবাড়ি ইউনিয়নের কাশর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি এক বছর আগে দল ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করে এখন উপজেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক। হবিরবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা মামুন মিয়া এখন হবিরবাড়ি ইউনিয়ন শ্রমীক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। হবিরবাড়ি ইউনিয়ন যুবদল নেতা বিপ্লব সরকার ৩ বছর আগে আওয়ামী লীগে যোগদান করে এখন উপজেলা যুবলীগের সদস্য। ৩ বছর আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সবুজ সরকার এখন উপজেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি।
বেদারুল ইসলাম বেদীন জয়পুরহাট জেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রদল নেতা মোয়াজ্জেম হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি। সাজাও হয়েছে যাবজ্জীবন। দীর্ঘ সময় ভারতে ছিলেন। দেশে এসে আওয়ামী লীগে যোগদান করেই মামলার জামিন নেন। এরপর স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য। গোলাম মতুর্জা শিপলু শহর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক ছিলেন। এরপর ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ নেতাদের হাত ধরে এখন শ্রমিক লীগের সদস্য। আবদুস সালাম পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের জামায়াতের আমির ছিলেন। নাশকতা ও হত্যা মামলাও ছিল তার বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালের পর তিনি এখন আওয়ামী লীগের নেতা। সিরাজুল ইসলাম পাঁচবিবি উপজেলার শিবির নেতা ছিলেন। এখন পাঁচবিবি পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ফয়েজ উদ্দিন জয়পুরহাট সদরের বিএনপির নেতা এবং রাজাকার আবদুল আলীমের সহযোগী ছিলেন। এখন জয়পুরহাট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
গত পৌনে নয় বছরে স্রোতের মতো অনুপ্রবেশকারীরা জায়গা করে নিয়েছে আওয়ামী লীগে। শুধু তাই নয়, তাদের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে সাধারণ নেতা-কর্মীরা। কিছু দিন আগে বগুড়ার শাজাহানপুরে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই আলী আতোয়ার ফজু চেয়ারম্যান গোহাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ রাজনৈতিক ইউসুফ আলীকে বেধড়ক পেটান। আমি এখন শিবির করি না, আওয়ামী লীগ করি। তোর মতো সাংবাদিককে আমি মেরেই ফেলব। এভাবে বলতে বলতে সদরুল আমিন রিপন নামে সাবেক শিবির নেতা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় এক সাংবাদিককে পেটান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, তাহলে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ গণমানুষের কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষের দখলে নয়, লুটেরা ও স্বাধীনতাবিরোধীদের দখলে চলে যাবে। আওয়ামী লীগ গণমানুষের এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষের এবং তাদের দখলেই থাকুক। তা হলে আওয়ামী পথ হারাবে না। দেশও এগিয়ে যাবে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন