রাতুল মন্ডল শ্রীপুর: উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি রিকশা, আর এই রিকশায় সকাল থেকে মধ্য রাত পযন্ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এক যুগের বেশি সময় ধরে দুটি ছেলেকে বড় অফিসার বানাবে বলে পরিশ্রম করছেন এক বাবা। কথা বলছিলাম এক যুগের বেশি সময় ধরে রিকশা চালিয়ে দুই ছেলেকে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়নরত এমএইচ সুজন মাহমুদ ও মো. সাইফুল ইসলামের রিকশাচালক বাবা শফিকুল ইসলামের সাথে।
শফিকুল ইসলাম বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমার পায়ের পেডেল চালিত রিকশার এখন আর মানুষ তেমন উঠতে চায় না। তারপরও শত মন্দার মাঝে হাসি-খুশি শফিকুল জানালেন তার পারিবারিক সমৃদ্ধির কথা। বললেন রিকশা চালিয়ে প্রাপ্ত আয় দিয়ে সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি সংসার চালাই কোন রকম।
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালি গ্রামের মৃত তাহের আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম পঞ্চাশ। দীর্ঘ এক যুুুগের বেশি সময় ধরে রিকশা চালিয়ে বড় ছেলে এমএইচ সুজন মাহমুদ রাজশাহী আর ছোট ছেলে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া চালাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, উদয়খালী গ্রামে একটি ভাঙ্গাচূরা ঘরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন শফিকুল। প্রায় পঞ্চাশ কোটায় বয়স হলেও শফিকুলের মনের দৃঢ় স্বতঃস্ফূর্ততার বহিঃপ্রকাশ তা প্রমান করে না। প্রতিদিন হাড়ভাংগা খাটুনির পরও ছেলেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করাতে পারছেন এটিই তার সবচেয়ে বড় পাওয়া।
শফিকুল ইসলাম বলেন, তার বাবার নাম তাহের আলী, তিনিও রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন
এক সময়ের জাঁকজমকপূর্ণ এই রিকশা কালের গর্ভে বিলীন হয়ে এখন কোন মতে ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তিনি।
পাকা রাস্তা ঘাট মিল কারখানা হওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন শিল্প পয়েন্টে ব্যবসায়িক দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে অনেকেই কিন্তু আমার আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকার কারণে বাবার দেয়া রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি আজও।
শফিকুল ইসলামের স্ত্রী, দুই ছেলে। বড় ছেলে এমএইচ সুজন মাহমুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ছোট ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় পুরোনো এই রিকশার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে শফিকুল ইসলাম বলেন, মানুষ এখন আর রিকশায় বেশি উঠতে চায় না, আবার নতুন ভাবে অনেক শিক্ষিত পরিবার শখের বশে মাঝে মধ্যে রিকশায় ঘুরাঘুরি করে। চরম অর্থ কষ্টে কোন মতে পারিবারিক সম্মান বজায় রাখতেই তিনি রিকশা চালান। তবে সরকারি সহযোোগিতা পেলে আমার ছেলেদেরকে আরো বেশি দূর পড়াতে পারবো বলে শফিকুল আশাবাদ ব্যক্ত করেন