ঢাকা: এবার দিনাজপুরের জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে এক নারীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন প্রলোভনে অবৈধ সম্পর্কের পর তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলেও ভিডিওতে উল্লে করেছেন নির্যাতিতা ওই নারী নিজেই। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। নির্যাতিতা ওই নারীও এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। জেলা প্রশাসকের দাম্ভিকতা তথা খারাপ আচরণ ও খারাপ চরিত্রের মানুষ উল্লেখ করে তার প্রত্যাহার দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও সুশীল সমাজ।
গত কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এক নারী ভিডিওবার্তা প্রকাশ হয়। যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিতে তার সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সম্প্রতি জামালপুরের জেলা প্রশাসকের সাথে এক নারীর ভিডিও ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর থেকেই দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক ওই নারীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে জেলা প্রশাসক ওই নারীর সাথে ভিডিও কল রেকর্ড, মোবাইল কল রেকর্ডসহ যাবতীয় তথ্যাদি ডিলিট করে দিতে বলেন এবং বিষয়গুলো কাউকে না জানাতে বলেন। পরে তার চাকরি থেকে বহিস্কার ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে রাজাকারের সন্তান বানিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। প্রাণে মেরে ফেলতে পারে তাই এই ভিডিও করেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ঘটনা জানাজানির পর ওই নারীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন পরিবার। কথা বলতে চাওয়া হলেও ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজী হননি কেউই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ওই নারীর সাথে এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবহেলাসহ নানান অভিযোগে জেলা প্রশাসকের প্রত্যাহার দাবি করেছেন তারা। মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, জেলা প্রশাসকের ব্যবহার ভালো না এবং চরিত্রও খারাপ। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে মুক্তিযোদ্ধারা লজ্জিত জানিয়ে জেলা প্রশাসকের অপসারণ ও তার শাস্তি কামনা করেছেন তারা। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে কোন সম্মান করেন না বলেও অভিযোগ তাদের।
মুক্তিযোদ্ধা মোজাহার বলেন, ‘এই জেলা প্রশাসক আমাদের এক মুক্তিযোদ্ধার কন্যার সাথে খারাপ আচরণ করেছে। যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি। আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। জেলা প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সাথে খারাপ আচরণ করেছে এবং অশ্লীল কার্যক্রম করেছেন। এর বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধার নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এমন ঘটনার সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। তাই ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি তাদের। বারবার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পরিবার তার দ্বারা নির্যাতিত ও নিপীড়িত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ দিনাজপুর শাখার সভাপতি সহদেব চন্দ্র রায় বলেন, এই জেলা প্রশাসক মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি নয়। মুক্তিযোদ্ধার কন্যার দিকে তার কুনজর ছিল যা ফেসবুকে এসেছে এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে চাকুরীচ্যুত ও বাস্তুচ্যুত করেছে। তাই আমরা এই জেলা প্রশাসকের দিনাজপুর থেকে অপসারণ চাই। যাতে অদুর ভবিষ্যতে যাতে কেউ এই ধরনের আচরন ও ঘটনা না ঘটে।
তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম বলেন, ‘আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে এই বিষয়টি তদন্ত করে চলে গেছেন, তারাই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এই ঘটনার সাথে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নাই।
ইতিমধ্যেই এই জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাকে অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন করা হয়েছে। এই ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। জেলা প্রশাসকের প্রত্যাহার না হলে তারা কেউই রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিবেন না এমন দাবিসহ ১১ দফা দাবি দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা।