রায়মঙ্গল-অঙ্গতিহারা-বজবুজা নৌপথ দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের কার্গো চলাচল বিশ্বের বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব যান থেকে অব্যাহত বর্জ্য নিক্ষেপ ও বিকট সাইরেনের কারণে এ আশংকা দেখা দিয়েছে।
গবেষকরা সতর্ক করে বলছেন, “১৪০ কিলোমিটারের এ নৌপথ দিয়ে যান চলাচল অব্যাহত থাকলে ৯ ডিসেম্বরের মতো যেকোনো সময় তেলবাহী ট্যাংকারডুবির ঘটনা ঘটতে পারে। আর এরকমটা হলে সেটা সুন্দবনের আরেক বিপর্যয় ডেকে আনবে।”
তারা বলছেন, “সুন্দরবনের রায়মঙ্গল নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ভারতের জাহাজগুলো। আর সেখান থেকে বজবুজা নদী দিয়ে অঙ্গতিহারা চেকপোস্ট হয়ে মংলা বন্দরে যাচ্ছে জাহাজগুলো।”
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে নৌ-পথে যান চলাচল অব্যাহত থাকলে তা শব্দ দূষণ তৈরি করে। আর এ দূষণ এড়াতেই সুন্দবনের গভীরে আশ্রয় নিচ্ছে বন্যপ্রাণীরা।”
অধ্যাপক হারুন বলেন, “যথাযথ তত্ত্বাবধানের অভাবে সুন্দবনের নৌ-পথে চলাচলকারী যানগুলো নদীতে তাদের বর্জ্য ফেলছে। আর তা তৈরি করছে নদী দূষণ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দবনের পরিবেশ।”
তিনি বলেন, “সারা দেশে যখন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, তখন সুন্দরবন হচ্ছে প্রাণীদের শেষ আশ্রয়স্থল। মানুষের অস্বাভাবিক আচরণ ও দুর্যোগ সৃষ্টির কারণে প্রাণীদের জীবনযাত্রায় ব্যাতয় ঘটছে। আর তাই প্রাণীরাও তাদের আচরণে বদল ঘটাচ্ছে।”
অঙ্গতিহারা স্থল চেকপোস্টের কাস্টম কর্মকর্তা বলেন, “রায়মঙ্গল-অঙ্গতিহারা-বজবুজা নৌ-পথ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৫টি জাহাজ চলাচল করে।”
সুন্দরবনে জন্ম থেকে বসবাসকারী প্রবীণ ব্যক্তি আবু বকর বলেন, “আগে হরিণ, বাঘ ও বন্যপ্রাণীদের যেখানে-সেখানে দেখতে পাওয়া যেত। জোয়ারের সময় হরিণরা চলে আসত লোকালয়ে। নৌপথে যান চলাচল বাড়ার পর থেকে এখন আর আগের মতো হরিণ, বাঘের দেখা মিলে না।”
পরিবেশবিদরা বলছেন, “স্বাধীনতার পর থেকেই কোলকাতার হেমনগর বন্দর থেকে মংলা সমুদ্রবন্দরে মাল বোঝাই জাহাজ চলাচল করছে। আর এর ফলে ১৪০ কিলোমিটার লম্বা সুন্দবনের এ নৌপথে তার প্রভাব পড়ছে। ভারী ইঞ্জিনের যান চলাচল ও তাদের বিকট সাইরেনে সুন্দবনের পরিবেশের ক্ষতি সাধন হচ্ছে।”
অধ্যাপক হারুন বলেন, “সুন্দরবন রক্ষায় অবিলম্বে রায়মঙ্গল-অঙ্গতিহারা-বজবুজা নৌ-পথ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করা প্রয়োজন।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞানের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, “নৌপথে যান চলাচলে একটি দিকনির্দেশনা থাকা উচিত, যাতে করে এর ফলে বনের কোনো ক্ষতি না হয়।”
সুন্দরবন পশ্চিমের বনবিভাগীয় কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আহমদ বলেন, “শ্যালা নদীর ঘটনাটি কর্তৃপক্ষের জন্য একটি আগাম বার্তা। ম্যানগ্রোভ বন রক্ষায় একটি নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন।”
গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দবনের শ্যালা নদীতে ট্যাংকার ডুবে সাড়ে তিন লাখ লিটার তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ে। আর তাতে হুমকিতে পড়ে ইউনস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য ‘সুন্দরবনে’র প্রাণীকূল। ট্যাংকার ডুবে নদীর ১০০ বর্গ কিলোমিটারে তেল ছড়িয়ে পড়ে। আর এর ফলে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্যালা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ২০টি খাল ও পশুর নদী