ঢাকা: সামগ্রিক উন্নয়ন ও এসডিজি বাস্তবায়নে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ জনগণের বহুপাক্ষিক ফোরাম ন্যামে’র ভূমিকা অনস্বীকার্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এতে অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থানকে জোরদার করেছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের অব্যবহিত পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থানকে জোরদার করেছে বলে আমি মনে করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে ন্যাম সম্মেলন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ন্যাম-এর ১৮তম শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবদান, পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণে আমাদের অঙ্গীকার, ফিলিস্তিনি জনগণসহ বিশ্বব্যাপী শোষিত মানুষের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ন্যামের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের একযোগে কাজ করার বিষয়গুলো বিশ্ববাসীকে অবহিত করা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের পাশাপাশি ন্যাম-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যোগ করেন তিনি।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলীয় জোটের জেষ্ঠ্য নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সংবাদ পত্র, সংবাদ সংস্থাসহ গণমাধ্যমের সম্পাদক এবং সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৫ ও ২৬-এ অক্টোবর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ‘১৮তম ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে’ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৩ সালে ন্যামে’র সদস্যপদ লাভের পর সে বছরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত ন্যাম-এর ৪র্থ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত নিরপেক্ষতার নীতির অনুসারী হিসেবে বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে ন্যাম-এ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৮তম সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ন্যাম-এর সাধারণ বিতর্ক পর্বে প্রধানমন্ত্রী ন্যামে’র মূলনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির সামঞ্জস্যের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
এ সময় তিনি শোষিত মানুষের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়ে ১৯৭৩ সালে ন্যাম-এর ৪র্থ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ থেকে উদ্ধৃতি তুলে ধরেন এবং সে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে ন্যামে’র মূলনীতিকে সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি বিশ্বব্যাপী শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সংঘর্ষ পরিহারে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য প্রদানের বিষয়টির উপরও জোর দেন। এছাড়া, একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সম্প্রীতিময় বিশ্ব নির্মাণে একবিংশ শতাব্দীর মূল্যবোধের আলোকে সকলের একযোগে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি, বিভিন্ন দেশে চলমান সংঘাত নিরসন, এসডিজি বাস্তবায়ন, পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রিকরণ, ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তির বিষয়সমূহ তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে।
শেখ হাসিনা বলেন, সমসাময়িক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ের পাশাপাশি আমি বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সাফল্যসহ দারিদ্র্য দূরীকরণ, চিকিৎসা সেবা, নারী উন্নয়ন, লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের অর্জনসমূহ সকলের সামনে তুলে ধরি। বিশেষ করে বাংলাদেশে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়টি উল্লেখপূর্বক আমি সন্ত্রাসবাদ, উগ্রপন্থা, মাদক-পাচার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সরকারের দৃঢ় অবস্থান তুলে করি।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং রোহিঙ্গা সমস্যাকে বাংলাদেশের জন্য প্রধান দুটি চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গাদের শান্তি, নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যাওয়াই যে রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান তা তিনি ন্যাম রাষ্ট্রসমূহের প্রতিনিধিদের সামনেও তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী মূল সম্মেলনের সাইডলাইনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, ইরানের প্রেসিডেন্ট, আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন এবং ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী তাঁর সঙ্গে সৌজন্য স্বাক্ষাৎ করেন।
ন্যাম-এ প্রদত্ত ভাষণে ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করা এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের জন্য ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এসময় ফিলিস্তিনের হেবরনে অবস্থিত একটি সড়কের নাম বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করা হবে বলেও ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ঘোষণা দেন।
এছাড়া, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট প্যালেসে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। এসময় বাংলাদেশ ও আজারবাইজানের মধ্যে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী সফরকালে বাকুতে অবস্থিত ‘মারটিয়ার্স লেন’ সমাধিস্থল পরিদর্শন করেন এবং আজারবাইজানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।