ঢাকা: বড় পরিবর্তন আসছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগের অন্য সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের নেতৃত্বেও বড় পরিবর্তন আসবে সামনের কাউন্সিলে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর প্রথম ধাক্কা খায় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূইয়াকে দিয়ে শুরু হওয়া ক্যাসিনো ঢেউয়ে বাদ পড়েছেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। দক্ষিণ সিটি কমিটির সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের ক্যাসিনো-চাঁদাবাজি কাণ্ডে বিব্রত ক্ষমতাসীন দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী। এমন অবস্থায় অনেকটা তড়িঘড়ি করেই সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের চার সহযোগী সংগঠনের। এরপর থেকেই আলোচনা- কারা আসছেন নতুন নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের তরফে বলা হচ্ছে, স্বচ্ছ ইমেজের তরুণদের তুলে আনা হবে নেতৃত্বে।
একইসঙ্গে অতীতে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন এমন নেতাদের কপাল খুলতে পারে আসন্ন সম্মেলনে। দলীয় সূত্র জানায়, কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই নতুন নেতৃত্ব অনুসন্ধান চলছে। কাউন্সিলে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন এমন নেতাদের বিষয়ে বিভিন্ন সূত্রে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
যুবলীগ: আগামী ২৩শে নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। নানা অভিযোগে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে অব্যাহতি দেয়ার পর কংগ্রেস পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদকে। তারা যথাক্রমে সম্মেলন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিব। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তারা সম্মেলন প্রস্তুতি দেখভাল করছেন। ২০শে অক্টোবর গণভবনে যুবলীগ নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে যুবলীগের নতুন কমিটির নেতাদের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫৫ বছর নির্ধারণ করা হয়। এ সিদ্ধান্তের কারণে বর্তমান কমিটির অনেক নেতাই আর এ সংগঠনের পরবর্তী কমিটিতে থাকার যোগ্য নন।
যুবলীগের ৩৫১ সদস্যের বর্তমান কমিটিতে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া সবার বয়স ৬০ বছর পেরিয়ে গেছে। কারও কারও বয়স ৭০-এর কোঠা ছাড়িয়েছে। তাই সভাপতি হিসেবে সংগঠনটির দায়িত্বে নতুন মুখ দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ হিসেবে যাদের নাম আসছে তার মধ্যে আছেন ঢাকা-১০ আসনের এমপি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তাপসের বড় ভাই অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশের নামও আলোচনায় আছে। এ পদে আলোচনায় আছেন সংগঠনের বর্তমান দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান ও অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন। সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন দুই যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সুব্রত পাল, দুই সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম, ফারুক হাসান তুহিন এবং প্রচার সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার ও বাহাদুর বেপারীর নামও আছে আলোচনায়। জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন এমন আলোচনাও আছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ: আগামী ১৬ই নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে ১১ ও ১২ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন। ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকায় সংগঠনটির সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সংগঠনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। নানা অভিযোগ থাকায় কাউন্সিল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকেও। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাউন্সিল পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নির্মল চন্দ্র গুহ ও গাজী মেজবাহউল সাচ্চুকে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকার দুই শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে লড়াইয়ে অন্তত এক ডজনেরও বেশি নেতা রয়েছেন। বর্তমান চার সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ শাকিব বাদশা, আব্দুল আলীম বেপারী রয়েছেন শীর্ষ পদের লড়াইয়ে।
এছাড়া কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেজবাহউল সাচ্চু, সহ সভাপতি মতিউর রহমান মতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেনও ও সহ পাঠাগার সম্পাদক এম এ হান্নানও আছেন শীর্ষ পদের দৌঁড়ে। এছাড়া তানভীর শাকিল জয়, এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু, কাজী শহিদুল্লাহ লিটন, এডভোকেট তাপস চন্দ্র পালও আছেন শীর্ষ পদের লড়াইয়ের আলোচনায়। ১৯৯৭ সালের তৎকালীন সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনকে আহ্বায়ক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম কমিটি হয়। পরে ২০০২ সালে প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন বাহাউদ্দিন নাছিম, সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেব নাথ। সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সভাপতি এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৬ সালের ৩১শে মে।