ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৫ কাউন্সিলরকে শোকজ করা হয়েছে। করপোরেশনের তিনটির অধিক বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থাকার কারণে ২৩শে অক্টোবর ডিএসসিসির ১৯ জন কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত দুই কাউন্সিলর ও ২৪শে অক্টোবর ডিএনসিসির ১৪ কাউন্সিলরকে এ নোটিশ দেয়া হয়। দুই সিটির সচিব স্বাক্ষরিত এসব নোটিশে সাত কার্যদিবসের মধ্য অনুপস্থিতির জবাব দিতে বলা হয়েছে। সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, তিনটি বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থাকলে নোটিশ দেয়ার নিয়ম থাকলেও তাদের কেউ কেউ টানা ১২টি সভায় অংশ নেননি। সম্প্রতি কাউন্সিলরদের নানা অনিয়মের বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় তড়িঘড়ি করে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নোটিশ দেয়া হয়েছে ডিএসসিসির এমন কাউন্সিলরের মধ্য রয়েছেন, ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাকসুদ হোসেন মহসিন, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. গোলাম হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলল মো. আশ্রাফুজ্জামান, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল বাসিত খান, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তবা জামান পপি, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসীম উদ্দিন আহমেদ, ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তারিকুল ইসলাম সজীব, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আনোয়ার পারভেজ বাদল, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মো. হাসান (পিল্লু), ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম রাসেল, ৩২ নম্বর কাউন্সিলর মো. বিল্লাহ শাহ, ৩৩ নম্বর কাউন্সিলর মো.আউয়াল হোসেন, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু, ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মকবুল ইসলাম খান টিপু, ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার হোসেন আলো, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আরিফ হোসেন, ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাছিম মিয়া ও সংরক্ষিত আসনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাশিদা পারভীন মনি ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শিউলি হোসেন। এছাড়া উত্তর সিটির নোটিশ পাওয়া কাউন্সিলররা হলেন, সংরক্ষিত আসনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেহেরুন্নেছা হক, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর খালেদা বাহার বিউটি, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলোরা পারভীন। ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রউফ, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. রজ্জব হোসেন, ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নাছির, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মজিবুর রহমান, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হোসেন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নুরুল ইসলাম রতন, ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৈমুর রেজা ও ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোতালেব মিয়া।
সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯-এ কাউন্সিলরদের অপসারণ নিয়ে যে ছয়টি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে তার প্রথমটি হচ্ছে যুক্তিসংগত কারণ ব্যতিরেকে সিটি করপোরেশনের পরপর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকা। এরই প্রেক্ষিতে এর আগে ক্যাসিনো কাণ্ডে নাম আসায় পরপর তিনটি বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থাকার কারণ দেখিয়ে ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিলো ডিএসসিসি। পরে ওই চিঠির প্রেক্ষিতে সাঈদকে অপসারণ করে মন্ত্রণালয়। এছাড়া ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকায় উত্তর সিটির কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ও তারেকুজ্জামান রতনকে গ্রেপ্তার করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নানা অপকর্মে জড়িত থাকায় অভিযান শুরুর পর গা ঢাকা দিয়েছেন অন্তত এক ডজন কাউন্সিলর। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানাগেছে, উত্তরের কাউন্সিলরদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টানা ১২টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম। ১১ সভায় অনুপস্থিত ছিলেন ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজ্জব আলী, ৮ সভায় অনুপস্থিত ছিলেন ৩নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম। আর দক্ষিণে সর্বোচ্চ ৮টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার, ৭ সভায় অনুপস্থিত ছিলেন ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হাসান ও ৫ সভায় অনুপস্থিত ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম।
সূত্র বলছে, দুই সিটির বেশিরভাগ কাউন্সিলর সরকার দলীয় তকমা থাকায় তারা অনেকটা বেপরোয়া। দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা নানা অপকর্মে লিপ্ত। ক্যাসিনো বাণিজ্য থেকে শুরু করে, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, খুন-খারাবি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অবৈধ কাজে জড়িত। কিছু কিছু কাউন্সিলর অবৈধ পন্থায় হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দেশে বিদেশে গড়ে তুলেছেন বিত্ত-বৈভব। অনেকেই বিদেশে সেকেন্ড হোম, অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত। তারা চলাফেরা করেন সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। সম্প্রতি ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে দুই সিটির অনেক কাউন্সিলরদের নাম উঠে এসেছে। এরপর থেকে অনেকেই গাঁ-ঢাকা দিয়েছেন। পালিয়ে গেছেন বিদেশে। কাউন্সিলরদের অনুপস্থিত নিয়ে দক্ষিণ সিটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আসে নাই। এখন নজরে আসছে তাই নোটিশ দিয়েছি। নোটিশপ্রাপ্ত কাউন্সিলরদের বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থাকা ছাড়া অন্য কোনো অভিযোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, অন্য কোনো কারণ থাকলে সেটাতো আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপার। যদি কোনো অভিযোগ থাকে তবে তারা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবে। এই ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের সুযোগ সীমিত। অনুপস্থিতির জন্য একজন কাউন্সিলরকে বহিষ্কার করা হয়েছে, নোটিশপ্রাপ্তদেরকে এমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটি মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তারা তদন্ত করবে। সবকিছু মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করছে।