ঢাকা: ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ সাজার রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করে হত্যাসহ নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতার ঘটনায় দ্রুত বিচার চেয়েছেন নারীনেত্রীরা। তারা বলেন, চূড়ান্ত বিচার নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতে এই সাজা যাতে বহাল থাকে, সে বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি তিন বছর আগে সংঘটিত সোহাগী জাহান তনু, মাহমুদা আক্তার মিতুসহ অন্য হত্যাকাণ্ডগুলোর বিলম্বিত বিচার দ্রুত করতে হবে।
নুসরাত হত্যা মামলার দ্রুত বিচার হওয়ায় কর্মজীবী নারীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ফেনী-১ আসনের এ সংসদ সদস্য বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় বাস্তবায়ন হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক হবে।
তিনি দ্রুত বিচারে সহায়তাকারী প্রধানমন্ত্রী, বিচার বিভাগ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সংবাদকর্মী, আইনজীবীসহ সংশ্নিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই বিচারের রায়ের মধ্য দিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান হলো। এ প্রসঙ্গে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘এ রায় তো ফ্যান্টাস্টিক! নারী নির্যাতনে দুর্যোগের মুহূর্তে এ রায় দৃষ্টান্তমূলক।’
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, ‘গত এপ্রিলে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেই রায় আমরা এত দ্রুত সময়ের মধ্যে পেয়ে গেছি, যা খুবই ইতিবাচক একটি ঘটনা। গত কয়েক বছরে যেসব নির্মম ঘটনা ঘটেছে, এ রায় সেগুলোর ক্ষেত্রে একটা ইঙ্গিত বহন করছে।’
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মানবাধিকারকর্মী সংসদ সদস্য অ্যারমা দত্ত বলেন, এই রায় নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক রায়; এর জন্য বিচার বিভাগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। এটি বর্তমান সময়কালের শ্রেষ্ঠ বিচার হয়েছে। এই বিচারের জন্য হয়তো লাখ লাখ মেয়ের জীবন বেঁচে যাবে। যেসব পুরুষ মনে করেন মেয়েরা ভোগের পাত্র, তাদের সঙ্গে যা খুশি করে ফেলা যাবে, পার পাওয়া যাবে, তাদের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা। সারা বিশ্ব এটার রেফারেন্স নিতে পারবে।
নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, ‘নুসরাত আর ফিরে আসবে না- এটা সত্য। কিন্তু অন্তত বিচারটা যে হলো, এটাই স্বস্তির। এ রকম আরও অপরাধ আছে। সেগুলোরও তদন্ত ও বিচার হওয়া দরকার- তনু হত্যা, মিতু হত্যার বিচার হওয়া দরকার। প্রতিটি হত্যার দ্রুত বিচার হতে হবে। না হলে এইভাবে চলতেই থাকবে।’
২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি ঝোপ থেকে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর (১৯) লাশ উদ্ধার করা হয়। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ হয়।
একই বছর ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। দুই হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও পুলিশ মামলার অভিযোগপত্র দিতে না পারায় শুরু হয়নি বিচার। এর মধ্যে তনু হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভও হয়েছে। তবুও এ ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
নারীনেত্রীরা বলেন, উচ্চ আদালতেও নুসরাতের হত্যাকারীদের শাস্তি যেন বহাল থাকে, যেন অপরাধীরা রেহাই না পায়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের জন্য কঠোরভাবে শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার।
মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির বলেন, আসামিরা যেভাবে নুসরাতকে হত্যা করেছে তাতে ১৬ জনই সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। তাই হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলেও নিম্ন আদালতের রায়টি যেন বহাল থাকে, সেজন্য সচেতন থাকতে হবে। রায়ের পর হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। তিনি বলেন, ‘আসামিরা উচ্চ আদালতে যাবে। তাই প্রতিটি জায়গা থেকে, প্রতিটি স্তর থেকে সচেতন থাকতে হবে।’
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহসভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘সব ধরনের হত্যার রায় যেন এভাবে হয়। যেহেতু এখানে আরও আপিলের প্রক্রিয়া বাকি আছে, সেখানেও যেন এভাবে দ্রুত রায় আসে- সেটাই আশা করি।’