ঢাকা: বেতন বাড়িয়ে বৈষম্য নিরসন দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দাবি পূরণের জন্য সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। আগামী ১৩ নভেম্বরের মধ্যে বেতন বৈষম্যের নিরসনসহ দাবি পূরণ না হলে এবং এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা না করা হলে প্রাথমিকের সমাপনীসহ সব পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রাথমিকের শিক্ষকেরা।
বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পূর্বঘোষিত সমাবেশে পুলিশের বাধা পেয়ে দোয়েল চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্যপরিষদ এ ঘোষণা দেয়।
আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা হওয়ার কথা। শিক্ষক নেতারা বলছেন, সরকার দাবি পূরণ না করলে তারা প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষাও বর্জন করবেন। এরপরও দাবি পূরণ না হলে তারা বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেবেন।
আন্দোলনকারী বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ শামসুদ্দিন তাদের এই নতুন কর্মসূচি জানান। তিনি বলেন, দোয়েল চত্বরে তাদের সংগঠনের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান এই কর্মসূচি ঘোষণা করে আজকের কর্মসূচি শেষ করেন। তবে এই ঘোষণার পরেও অনেক শিক্ষক ওই এলাকায় এখনো বিক্ষিপ্তভাবে রয়ে গেছেন।
সংগঠনটির আহবায়ক আনিসুর রহমান বলেন, সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের জন্য দশম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১১তম গ্রেডের ঘোষণা ২০১৭ সালে দেওয়া হয়েছিল। এখনো সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন হয়নি।
তিনি বলেন, ১৩ নভেম্বরের মধ্যে বেতনের বৈষম্য নিরসন না করা হলে ১৪ নভেম্বর থেকে প্রতিটি কর্মবিরতির পাশাপাশি ১৭ নভেম্বরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে পূর্বঘোষিত সমাবেশ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কয়েক হাজার শিক্ষক শহীদ মিনার এলাকায় জড়ো হন। কিন্তু পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়।
পরে তারা দোয়েল চত্বরে গিয়ে সমাবেশ করে কর্মসূচি ঘোষণা করে সমাবেশ শেষ করেন। এরপরও অনেক শিক্ষককে শহীদ মিনারে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আনিসুর বলেন, দোয়েল চত্বরে সমাবেশ করলেও পুলিশ তাদের মাইক ব্যবহার করতে দেয়নি। এ কারণে কর্মসূচি ঘোষণার খবর অনেকে জানতে পারেনি।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে এবং প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকরা ১৫তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। আর প্রধান শিক্ষক পাচ্ছেন ১১তম গ্রেডের বেতন। শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১১তম গ্রেড এবং প্রধান শিক্ষকের জন্য ১০তম গ্রেড সংস্কার করার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। দীর্ঘ দুই বছরেও সেই দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখন আবার আন্দোলনে নেমেছেন তারা
কিশোরগঞ্জ থেকে আসা আব্দুল মালেক নামে এক শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষকদের ১০ নং গ্রেডে বেতন হওয়া উচিত, সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে বেতন ভাতার অসামঞ্জস্যতা বন্ধ করার দাবিতে এ আন্দোলন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৯ মার্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু পরে মন্ত্রণালয় প্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১১ ও অপ্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১২তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করে। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করে আসছিল।
বিষয়টি নিয়ে তারা আদালতের দ্বারস্থও হন। গত ফেব্রুয়ারিতে সরকারি প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে বেতন দিতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট, যা ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে আদেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। কিন্তু সে আদেশ এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
বিষয়টি বিবেচনায় এনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১২তম গ্রেড এবং প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেলে ১০তম গ্রেডে উন্নীতকরণের প্রস্তাব দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ বছর ১১ সেপ্টেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে জানায় অর্থ মন্ত্রণালয় ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাদিয়া শারমিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদে বেতন গ্রেড যথাযথ ও সঠিক থাকায় প্রধান শিক্ষক পদের বেতন গ্রেড-১০ ও সহকারী শিক্ষক পদের বেতন গ্রেড-১২তে উন্নীতকরণের সুযোগ নেই।’প্রাথমিকের শিক্ষকদের বিদ্যমান বেতন যথাযথ রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে।
প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকদের একাদশ গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন নির্ধারণের দাবিতে ‘প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্যপরিষদের’ ডাকে এর আগে ১৪ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা।