“প্রেম করে সব দিয়ে একেবারে নিঃস্ব হওয়া উচিত না। কারণ পরবর্তীতে বাঁচার জন্য তার কাছে ভিক্ষা করতে হবে।”
প্রেম সম্পর্কে আমার জ্ঞান শূন্যের কাছাকাছি। এ শূন্যজ্ঞান থেকে প্রেমের শূন্যস্থান পূরণ করতে গেলে কিছু কথা বলতে হয় “কাউকে ভালোবাসতে গিয়ে অন্তত এইটুকু খেয়াল রাখবেন, সেক্রিফাইস করতে গিয়ে যেন নিজের জীবন থেমে না যায়”
একটি সম্পর্ককে সুস্থ রূপ দেওয়ার জন্য পরস্পরের প্রতি সম্মান রেখে সব বিষয়ে নিজেদের মনোভাব তুলে ধরা খুব প্রয়োজন। একজনের সকল খারাপ দিক মেনে নেয়াটাও খারাপ। ব্যক্তিত্বহীন মানুষের সবকিছু মেনে নেয়াটাও নিজের ব্যক্তিত্ব নষ্ট, তা প্রমাণ করে।
খারাপ মানুষ এবং খুব ভালো মানুষ এই দুই ধরনের মানুষের জন্য সম্পর্কে এত সমস্যা। এই দুই শ্রেণীর মানুষই আদর্শ সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। খুব ভালো মানুষেরা সবকিছু মেনে নেয়। নিজের যতই ক্ষতি হোক, সব নিরবে মেনে নেয়। তাই খারাপেরা আরো বেপরোয়া হয়ে প্রতিষ্ঠিত খারাপ হয়ে ওঠে। খুব ভালো মানুষেরা যদি খারাপ অন্যায়ের প্রতিবাদ করত, তাহলে খারাপেরা খারাপ হওয়ার এতটা সুযোগ পেত না। তাই খারাপ কাজ মেনে নেয়াটাও খারাপ। খুব ভালো মানুষেরাই খারাপ মানুষের সহযোগি।
মনে করেন,
সম্পর্কের একটি পর্যায়ে গিয়ে আপনি বুঝলেন তার খারাপ দিকগুলো- ব্যাপক সন্দেহপ্রবণতা, নেতিবাচক মানসিকতা এবং ভয়ঙ্কর। সম্পর্কের নামে আপনার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণ করছে। কিছুতে দ্বিমত থাকলে ব্ল্যাকমেল করছে। যা ইতিমধ্যে অভদ্রতা এবং অনধিকার চর্চা। তার কাছে আপনার ন্যূনতম স্বাধীনতা নেই। এতটা নেতিবাচক পরিবেশে বসবাস করাটা অত্যন্ত পীড়াদায়ক ও অপমানজনক। তার নেতিবাচক চিন্তা ধারার সাথে আপনার চিন্তাধারার পার্থক্য বিশাল। বুঝতে পারলেন আপনি ভুল প্রেমে আছেন। কিন্তু আপনি প্রেম ব্রেকআপ করলে, তার নিজের বা আপনার বড় কোন ক্ষতি করতে পারে সে। সে পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিবে এবং আরো বেশি খারাপ হয়ে যাবে ভাবছেন। সো তাকে কিন্তু নিজেরই চেষ্টা করতে হবে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। আপনি তার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখলে সে যদি পড়াশোনা ছেড়ে দেয়, সেই দায়িত্ব আপনার নয়। মনে রাখবেন, আমাদের সবার প্রথম দায়িত্ব আমাদের নিজের প্রতি। আপনি তাকে সরাসরি বলেন যে, শর্ত দিয়ে এবং পাগলামি করে ভালোবাসার সম্পর্ক বেশি দিন ধরে রাখা যায় না। আপনি যাকে বিশ্বাস করেন তার কাছেও বিশ্বাস প্রত্যাশা করেন।
আপনি নিজেকে বারবার প্রশ্ন করে বোঝার চেষ্টা করেন। করুণা করে একটি সম্পর্ককে কতদূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবেন? আপনি কি ভালো করে ভেবে দেখবেন, এমন সম্পর্কে থাকা কি সত্যিই ভালো কাজ? নাকি আপনার অসহায়ত্বের কারণে এক ধরনের নির্ভরশীলতা?
সত্যি প্রনয় না থাকলে প্রাণহীন ভালোবাসা দিয়ে এক জনকে ভালো রাখতে গিয়ে আপনাকে ক্রমাগত বানিয়ে অনেকগুলো কথা বলতে হচ্ছে। এটি এখন যেমন আপনার জন্য খুব পীড়াদায়ক, তেমনি অপরাধবোধও তৈরি হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে তাঁর জন্যও খুব কঠিন হবে এটি মানতে, যে তাঁর সাথে আপনি এধরনের একটি কাজ করছেন।
এমন ভাবে সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার অভিনয়টা শুধু নিজে কে না, তাকেও ঠকানো। আজ যার পাগলামির কারণে বিপদজনক মানুষের সাথে আছেন। আগামীতেও সম্পর্ক ইতি টানতে চাইলে এমন পাগলামি করে আপনাকে বন্দী করে রাখবে। সারা জীবন তার কাছে আপনার ইচ্ছা স্বপ্ন ভালোবাসা গীতাঞ্জলি দিতে হবে। পিষে মারবে আপনার ভবিষ্যৎ কে। ভবিষ্যতে জীবনের এক পর্যায়ে আপনার গোটা অস্তিত্ব নড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে পড়ে যেতে পারেন।
কাজেই আমার অনুরোধ হচ্ছে আপনারা যারা এমন সম্পর্কে আছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়ে সত্য কথা বলে দেন। ক্ষমার চেয়ে বড় কোনো উপহার নেই। এতে করে আপনার মন থেকে ভারী বোঝা নেমে যাবে এবং আপনি অনেক হালকা বোধ করে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারবেন। তাঁরা প্রথমে রাগ করবেন এবং অনেক দুঃখও পাবেন। তবে শেষ পর্যন্ত নিশ্চয়ই বুঝতে চেষ্টা করবেন যে আপনি আসলে তাঁকে খুব ভালোবাসেন বলেই তার জীবনের কোনো ক্ষতি হোক তা আপনি চান না।
যদি এতটা অসম্মানের পরও তার কাছেই থাকতে হয়, তাহলে তার কার্যকলাপের ব্যাপারে বেশি আগ্রহ না দেখিয়ে নিজের প্রতি যত্নশীল হোন।
মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ তার কাছেই আশ্রয় চায় যে তাকে বোঝে, বিশ্বাস করে এবং নিরাপদ বোধ করতে সহায়তা করে। আপনি স্বাধীনভাবে সন্মানে চলতে পারলে নিজেকে অনেক বেশি শ্রদ্ধা করতে পারবেন। আত্মসম্মানবোধ ও আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে পারলে আপনার কাছে জীবনটা অনেক বেশি অর্থবহ ও স্বস্তিকর মনে হবে। তখন মন এত ভালো থাকবে যে আপনি স্বপ্ন পূরণ করে জীবন উপভোগ করতে পারবেন। আশা না বিশ্বাস করি আপনি এখন থেকে সারাক্ষণ শুধু একটি মানুষের বিশ্বাসের পরিক্ষা না দিয়ে এই অসহায় অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে মাথা উঁচু করে পথ চলবেন।