পলি,শিরিন ও আমি খাটে বসে বসে গল্প করছিলাম।এই গল্প, সেই গল্প সব করা শেষ হয়ে যায় তবুও লিপি,রেজারা আসছে না।পলি বার বার ঘড়ি দেখছে।সম্ভবত ওর ক্ষুধাটা একটু বেশিই লেগেছে।২ টার বেশি বাজে।ক্ষুধা তো লাগারই কথা আমারও ক্ষুধায় নাড়িভুড়ি উল্টে আসছে।কিন্তু লজ্জায় বলতেও পারছি না।পলি চট করে আমার মনের কথাটা বলে দিল।
২ টার বেশি বাজে ক্ষুধা তো লাগবেই।
আমিও পলির সাথে একমত হলাম।
ঠিক তাই।তবুও সবার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।কারণ একসাথে খাওয়ার একটা আলাদা মজা আছে বলেই আমরা তিনজনে মিলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে ওদের আসার অপেক্ষায় পথ চেয়ে রইলাম।এর মধ্যে একগাল হাসি ও মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে পান্না ভাবী ঢুকলেন।পান্না ভাবীর সাথে আজই আমার প্রথম দেখা।অথচ মনে হলো তাকে আমি এর আগেও কোথাও দেখেছি।ভীষণ আপন মনে হলো তাকে।এবার ৪ জনে মিলেই গল্প করতে লাগলাম।
নীল রংটা লিপির ভীষণ পছন্দের।তাই গাড়ীও কিনেছে নীল রংয়ের।রামপুরা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কাছে আসতেই পাশ থেকে দ্রুত ছুটে আসা একটা গাড়ী হাল্কা ধাক্কা দিল ওর নীল গাড়ীটাকে।।ভাগ্য ভালো ছিল বলে গাড়ীতে থাকা যাত্রীদের কারোই তেমন একটা ক্ষতি হয়নি।ক্ষতি হয়েছে লিপির ভীষণ প্রিয় নীল গাড়ীটার।নীল গাড়ীটার
চামড়া ছিলে গেছে বেশ খানিকটা।গাড়ী আহত হওয়াতে যেন লিপির হৃদয় আহত হলো।
আহা!আমার এত শখের নীল গাড়ীটা এমন কষ্ট পেল!
লিপি মনে মনে ঐ গাড়ীর গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলো। গাড়ীর সামনে বিশাল জটলা।বন্ধু রেজা নেমে গিয়ে জটলা থামিয়ে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করলো।অতঃপর গাড়ী আবার চলতে শুরু করলো।আমরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফোনে ফোনে ওদেরকে শিরিনের বাসার লোকেশন বলে দিলাম।
এরপর লিপি,রেজা ও রাবেয়া আপাএসে ঘরে ঢুকলেন। রাবেয়া আপার হাতে বিশাল এক কেক ও বড় বড় প্যাকেট হাতে।শিরিনের হাতে প্যাকেটগুলো দিয়ে রাবেয়া আপা ভিতরে গিয়ে বসলেন।
আমি মুগ্ধ হয়ে খানিকক্ষণ রাবেয়া আপার মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। তাকে সালাম দিলাম।আমার চোখ বার বার আটকে যাচ্ছে রাবেয়া আপার দিকে।মাশাল্লাহ এই বয়সে এসেও তিনি কত সুন্দর আছেন।নিজেকে এখনও কি সুন্দর রেখেছেন। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে যদি মাইন্ড করে অথবা যদি নজর লেগে যায় এটা ভেবে আমি বন্ধু রেজা ও লিপির দিকে মনোযোগ দিলাম।
ওরা ঘরে ঢোকার সাথে সাথে পুরো ঘর গরম হয়ে গেল।লিপি ও রেজা যেখানে থাকবে সেখানে গরম না হয়ে উপায় কি।সাথে আছি আমি।
হঠাৎ খেয়াল করলাম লিপি হন্ত দন্ত হয়ে কি যেন খুঁজছে।অতঃপর সে যেটা খুঁজছে সেটা পেয়েও গেল।আমি ও রেজা গল্প করছিলাম ঠিক এমন সময় লিপি দৌড়ে এলো।ওর চোখে মুখে প্রশান্তির ঢেউ।
হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে বললো,আহ শান্তি!
রেজা জানতে চাইলো, কিসের শান্তি?
ঃবন্ধু ভোগেই সুখ না।ত্যাগেই সুখ।আমি এখন ত্যাগ করে এলাম তাই এতো শান্তি…
লিপির কথা শুনে আমরা হাসতে হাসতে শেষ।এর পর তিন বন্ধু মিলে খানিকক্ষণ গল্প করলাম।
খিদায় পেট চোঁ চোঁ করতে লাগলো।৩ টা বাজে এখনও মলির খবর নাই।শেষে বাধ্য হয়েই আমরা সবাই খেতে বসলাম।মানুষ সংখ্যায় বেশি হওয়াতে নীচে চাদর পেতে আমরা সবাই খেতে বসলাম।আমাদের সামনে এখন শরিয়তপুরের জনপ্রিয় খাবার কাজীর ভাত।সাথে শিরিনের নিজ হাতে বানানো ১৪ রকমের ভর্তা,।ইলিশ মাছ ভাজা ও আরো কয়েক রকমের ভাজা।এতরকমের ভর্তা দেখে আর লোভ সামলাতে পারলামনা।সাথে সাথে সবাই মিলে খেতে বসলাম।খাওয়ার মাঝখানে শিরিনের হাজবেন্ড মানে এই বাসার বাড়িওলা জনাব
গিয়াসউদ্দিন সিদ্দিকী ভাই আমাদের সাথে দেখা করে ও কুশলবিনিময় করে নিজ কাজে চলে গেলেন।
গল্পে, আড্ডায় বেশ কব্জি ডুবিয়ে খাচ্ছি সবাই।
ভর্তা বলে কথা।এতো ভর্তা একসাথে! কোনটা রেখে কোনটা খাই এমন অবস্থা।
আমাদের খাওয়া শেষ হতেই মলি,তুহিন,সুইটির আগমন। শিরিনের মেয়ে এরিন,তুহিনের মেয়ে অধরা ও সুইটির মেয়ে সিনথিয়া, সানিতা
ও মৌমি একসাথে বসে মজা করতে করতে খাচ্ছে।একদিকে শিরিন খাচ্ছে তার বান্ধবীদের নিয়ে অন্যদিকে শিরিনের মেয়ে এরিন খাচ্ছে তার বান্ধবীদের নিয়ে।এটা একটা দেখার মত দৃশ্য।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে সবাই মিলে ছাদে গেলাম ফটোসেশনের জন্য।
ছাদে গিয়ে দেখি….