টেকনাফ (কক্সবাজার): মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ খালাসের অভাবে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে পচে যাচ্ছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, বাজারে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে ব্যবসায়ীরা কৌশল অবলম্বন করছেন। গত এক সপ্তাহে প্রায় তিন হাজারের বেশি পেঁয়াজের বস্তা পচে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া মিয়ানমার থেকে গত দুই দিন পেঁয়াজ আমদানি করেননি ব্যবসায়ীরা।
এদিকে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক রাখতে মঙ্গলবার দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনসহ একটি প্রতিনিধি দল টেকনাফ স্থল বন্দর ঘুরে দেখেন এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল হাসান।
ইউএনও রবিউল হাসান বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের কিছু সমস্যা রয়েছে, সেগুলো দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজের ট্রলার দ্রুত খালাস করে ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। কেন ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, টেকনাফ স্থল বন্দরে পচে যাওয়া পেঁয়াজ খোলা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে কয়েকজন শ্রমিক ভাল পেঁয়াজগুলো সংগ্রহ করছেন। এমনকি নাফ নদীর তীরে পচা পেঁয়াজের বস্তা পরে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া দুইদিন আগে আসা বন্দরে পেঁয়াজ ভর্তি ছোট-বড় ৭টি ট্রলার ঘাটে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।
নুর আলম নামে এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, অন্যজনের ট্রলারে করে তার কিছু পেঁয়াজ এসেছিল। খালাসে দেরি হওয়ায় পেঁয়াজগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। বন্দরের গাফলতির কারণে ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে।
টেকনাফ শুল্ক স্টেশন ও স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে (১৫ অক্টোবর পর্যন্ত) মিয়ানমার থেকে আসা টেকনাফ স্থলবন্দরে ৮ হাজার ৪৯৭ দশমিক ১১০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ খালাস করা হয়ছে। এই মাসে সর্বশেষ ১৩ অক্টোবর ৫৩ হাজার বস্তা (২ হাজার ৮০ মেট্রিক টন) পেঁয়াজ মিয়ানমার থেকে এসেছিল। তার মধ্যে মোহাম্মদ হাসেমের ৬৪০ ও মোহাম্মদ জব্বারের কাছে ৩২০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসে। বাকিগুলো অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে এসেছিল। তবে গত দুই দিন ধরে মিয়ানমার থেকে কোন পেঁয়াজের ট্রলার টেকনাফে বন্দরে আসেনি।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, গত এক সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত তিন হাজারের বেশি পেঁয়াজের বস্তা খালাসে দেরি হওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। বন্দর কৃতপক্ষের জনবলের অভাবে প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসা কমে গেছে।
তিনি বলেন, চার্জ নিতে রাতে বন্দর কৃতপক্ষ পেঁয়াজের ট্রাকের ছাড়পত্র দিচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের লোকসান কমাতে সরকারের কঠোর নজরদারি বাড়ানো দরকার বন্দরে।
মোহাম্মদ সোহেল নামে এক পেঁয়াজ আমদানিকারক বলেন, খালাসে দেরি হওয়ায় তার কাছে আসা বেশ কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া বন্দরে অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। এইভাবে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হলে, এক সময় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে নিম্ন মানের পেঁয়াজ আমদানি করায়, সেগুলো পঁচে যাচ্ছে। সেদেশে যে ঘাটে পেঁয়াজের ট্রলার লোডিং হয়, সেটি এখানে পৌঁছাতে ১০ দিন সময় লাগে। মূলত বাজারে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে এসব তালবাহানা করছে ব্যবসায়ীরা। বন্দর কৃর্তপক্ষ ব্যবসায়ীদের সাধ্যমত সেবা দিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি তার।
টেকনাফ স্থল বন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা আবছার উদ্দিন বলেন, গত দুই দিন ধরে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজের কোন ট্রলার আসেনি। চলতি মাসে ৮ হাজার ৪৯৭ দশমিক ১১০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এসেছিল। তবে দেশে পেয়াঁজের সংকট মোকাবেলায় ব্যবসায়ীদের আরো আমদানী বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।