ঢাকা:চাঞ্চল্যকর আবরার হত্যাকা-ে নিজের জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ। বেদম মারপিটের একপর্যায়ে আবরার যখন অসুস্থ ওই সময়ে তাকে পিটিয়েছে মুজাহিদ। মোটা রশি দিয়ে আবরারের পিঠে আঘাত করে সে। পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল মুজাহিদকে ঢাকার মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসির আদালতে হাজির করা হয়। এসময় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় মুজাহিদ। একইভাবে রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আবরারকে হত্যা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে সে।
সূত্রে জানা গেছে, আদালতে স্বীকারোক্তিতে ও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্রলীগ নেতা মুজাহিদ জানিয়েছে, শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে পিটানো হচ্ছিলো আবরারকে। ঘটনার সময় ওই কক্ষে উপস্থিত হয় সে। আবরারকে এই কক্ষে ডেকে আনা হবে এটা জানা ছিলো ছাত্রলীগ নেতাদের।
যে কারণে সবাই খোঁজ-খবর নিচ্ছিলো। কেউ কেউ ওই কক্ষে সরাসরি উপস্থিত হয়। মুজাহদি যখন ওই কক্ষে আবরার তখন মেঝেতে পড়েছিলো। রাত প্রায় পৌনে ১১ টার দিকে বুয়েট ছাত্রলীগের উপ সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল আবরারকে মেজে থেকে উঠিয়ে কয়েকটা চড় মারে। এসময় অকথ্য ভাষায় গালিও দেয়। চড় মারে তাবাখখারুলও।
এসময় মোটা রশি হাতে নিয়ে আবরারকে পিটাতে থাকে মুজাহিদ। আবরার তখন বারবার রশি ধরে তাকে না মারার জন্য অনুনয় করেছিলেন। চিৎকার করতে করতে বলেছিলেন, ‘আর না ভাই, আর না.. আমি আর পারছি না।’ একপর্যায়ে মুজাহিদকে সরিয়ে দিয়ে স্ট্যাম্প হাতে নিয়ে পিঠে, পায়ে পিটাতে থাকে ইফতি। আবরার তখন ‘মাগো মাগো’ বলে চিৎকার করছিলেন। কিছুক্ষণ পরেই ২০১১ নম্বর কক্ষে ঢুকে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু। কক্ষে ঢুকেই স্ট্যাম্প হাতে নিয়ে সবাইকে সরিয়ে দেয় অনিক। তারপর বেদম পেটাতে থাকে। আবরারের চিৎকার তখন বেড়ে যায়। বারবার পায়ে পড়ে তাকে আর না মারতে বলেছিলেন। আবরার বলেছিলেন, ‘এভাবে মারবেন না, আমি বাঁচবনা ভাই, ভাই..।’ কিন্তু আবরারের আর্তনাদে সাড়া না দিয়েই তাকে পিটাতে থাকে অনিক। রাত ১২টা পর্যন্ত এভাবেই পিটানো হয় আবরারকে।
৬ই জুন আবরার হত্যাকা-ের পরপরই ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মুজাহিদসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলো সে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় এর আগে বুয়েট ছাত্র ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন ও অনিক সরকার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে গত ৬ই অক্টোবর রাতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের পিতা বরকতুৃল্লাহ বাদি হয়ে ১৯ জনের নামে চকবাজার থানায় মামলা করেন। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। আবরার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত কয়েক দিনে মোট ১৯ জন গ্রেপ্তার করেছে এ মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।