ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিকেই বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলেছেন, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি আর ভারত তোষণের জন্যই আওয়ামী লীগ সরকার এসব চুক্তি করেছে। তারা ক্ষমতায় থাকতেই এ চুক্তি করেছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে এর বিরুদ্ধে গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে দলটির নেতারা এসব কথা বলেন। ‘দেশবিরোধী’ চুক্তি বাতিল ও বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে দুই দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। একই দাবিতে বিভাগীয় শহরগুলোতেও সমাবেশ করেছে বিএনপি। এ দাবিতে রোববার সারাদেশের জেলা সদরে জনসমাবেশ করবেন দলটির নেতাকর্মীরা।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকেই নয়াপল্টন এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। প্রশাসন থেকে সমাবেশের অনুমতি না পেলেও যে কোনো মূল্যে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় দলটি। এর পর সকাল থেকে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন।
অন্যদিকে কার্যালয়ের দুই দিকে কাকরাইল মোড় ও ফকিরাপুলের সামনে পুলিশ ব্যরিকেড দিয়ে তল্লাশির নামে নেতাকর্মীদের বাধা দেয় বলে অভিযোগ করে দলটি। এ সময়ে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি নেতাদের। তবে দুপুর দেড়টার দিকে দুই শর্তে সমাবেশ করার মৌখিক অনুমতি দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি। শর্ত হলো- মঞ্চ তৈরি না করা এবং যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানো। পরে বেলা ২টা থেকে সমাবেশের কার্যক্রম শুরুহয়। সমাবেশে খালেদা জিয়া ও আবরার ফাহাদের ছবির পাশাপাশি ‘দেশবিরোধী’ চুক্তি বাতিলের দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ডও দেখা গেছে নেতাকর্মীদের হাতে। কাকরাইলের নাইটিংগেল রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হন।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ফেনী নদীর পানি সরবরাহ, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার, বঙ্গোপসাগরের উপকূল পর্যবেক্ষণে যৌথ রাডার স্থাপন, এলপিজি রফতানি করার চারটি চুক্তিই বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী। এসব চুক্তির একটিও বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে নয়, জাতীয় স্বার্থে নয়। শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ভারতের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থবিরোধী এ চুক্তি করেছে।
তিনি বলেন, এসব চুক্তির উদ্দেশ্য একটাই- গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা। ভোট ডাকাতির সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, এদেশের জনগণ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করেছে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হলে, সম্প্রসারণবাদ-আধিপত্যবাদ বাংলাদেশকে গ্রাস করলে বাংলাদেশের মানুষ বসে থাকবে না।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী আর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চুক্তির প্রতিবাদ করায় আবরারকে হত্যা করা হয়েছে। আবরারের ওই প্রতিবাদ, ফেসবুক স্ট্যাটাস এদেশের জনগণের মনের কথা। এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষের কথা, আধিপাত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা। সরকার চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ক্যাসিনোবাজ, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু এই আবরার রক্ত দিয়ে তাদের পতনের আন্দোলন সূত্রপাত করে গেছে, বীজ বপন করে গেছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। তারা এমন ফাঁদে পড়েছে, সেই ফাঁদ থেকে তাদের কোনো নিস্কৃৃতি নেই। এই ফাঁদ থেকে তারা উঠে আসতে পারবে না। এই সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার। এই দেশের মানুষ কখনও এ ধরনের সরকারকে বরদাশত করবে না। আজকে আন্দোলনের সময় এসেছে। প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। এই সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া যায় না।
ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির সমালোচনা করে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে তিনি বাংলাদেশের স্বার্থ বিক্রি করেননি। কিন্তু দেশের মানুষ বোকা নয়। তারা জানে, ভারতে গিয়ে আপনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বিক্রি করে এসেছেন। কিন্তু কিছুই আনতে পারেননি। এই ব্যর্থতা ইতিহাসে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য কালিমা হয়ে থাকবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি যদি কোনো সরকারের থাকে, সেই সরকার কিছু আদায় করতে পারবে না। তারা শুধু বহিঃশক্তিকে দিয়েই যাবে।
মহানগর দক্ষিণের সভাপতি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে এবং উত্তর ও দক্ষিণের দুই সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার ও আহসান উল্লাহর পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আজিজুল বারী হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, অঙ্গ সংগঠনের আফরোজা আব্বাস, সাইফুল আলম নিরব, শফিউল বারী বাবু, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাদেক আহমেদ খান, আবদুল কাদির ভুঁঁইয়া জুয়েল, মোরতাজুল করিম বাদরু, ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বক্তব্য দেন।