ঢাকা:অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার দায়ে অভিযুক্ত আরও কয়েকজন প্রভাবশালীর অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এনবিআর। যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের প্রধান সহযোগী এনামুল হক আরমান, এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম, অনলাইনে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী সেলিম প্রধানসহ কয়েকজন এবং তাদের পরিবারের সদস্য ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে এসব ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট বা অন্য কোনো সম্পদ থাকলে তাও ফ্রিজ রাখতে হবে। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) থেকে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়।
গত ৬ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার একটি বাড়ি থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের সঙ্গে এনামুল হক আরমানকে গ্রেফতার করে র্যাব। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি। তার বাবা রফিকুল হক, মা সাফুরা আকতার, স্ত্রী শাহনাজ আখতার বীথির অ্যাকাউন্টও ফ্রিজ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরমানের মালিকানাধীন দেশ বাংলা মাল্টিমিডিয়া এবং আরমান এন্টারপ্রাইজের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এনবিআরের চিঠিতে বলা হয়েছে, এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকসহ যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে একক বা যৌথ নামে পরিচালিত হিসাব, লকার বা ভল্টে রক্ষিত অর্থ, অলঙ্কারাদি, স্বর্ণ বা রৌপ্যের পিণ্ড, ফিন্যান্সিয়াল ইন্সট্রুমেন্ট বা অন্যান্য মূল্যমান সামগ্রী উত্তোলন ও স্থানান্তর স্থগিত করা হলো।
অভিযান শুরুর পর থেকে পলাতক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মতিঝিলের ওয়ার্ড কমিশনার এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ। মমিনুল হক সাঈদ, তার বাবা একেএম জহিরুল হক, মা মমোতাজ বেগম, স্ত্রী ফারহানা আহমেদ বৌশাখি এবং তার মালিকানাধীন বৌশাখি এন্টারপ্রাইজের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। র্যাবের হাতে আটক কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি ও বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শফিকুল আলম, তার স্ত্রী নাহিদ আখতার এবং তার মালিকানাধীন জাহারাত অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নগদ পাঁচ কোটি ৫ লাখ টাকা ও ৮ কেজি স্বর্ণসহ আটক দুই ভাই গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও রূপন ভূঁইয়া, তাদের বাবা সিরাজুল হক, মা মমতাজ বেগম, দুই ভাইয়ের মালিকানাধীন এনু রূপন স্টিল করপোরেশন ও এনু রূপন স্টিল হাউসের অ্যাকাউন্টও ফ্রিজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অনলাইনে ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি, অস্ত্র চোরাচালান, চেক জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত সেলিম প্রধান, তার বাবা হান্নান প্রধান, মা হাসিনা বেগম, স্ত্রী মাসুমা প্রধান এবং তার মালিকানাধীন এইউ এন্টারটেইনমেন্ট, প্রধান বিউটি কেয়ার অ্যান্ড স্পা, প্রধান ফ্যাশন, প্রধান বিউটি কেয়ার অ্যান্ড স্পা ট্রেনিং সেন্টার ও প্রধান ম্যাগাজিনের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। কাকরাইলের জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক জাকির হোসেন ও স্ত্রী সুমা আক্তারের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।
সাতজনের অ্যাকাউন্ট তলব: উপরোক্ত ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ ছাড়াও অন্তত সাতজনের অ্যাকাউন্ট তলবের ঘটনা ঘটেছে। তালিকায় আছেন– এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, জয়পুরহাটের শাহনাজ পারভীন, ময়মনসিংহের জাকির হোসেন পলাশ, চাঁদপুরের খোরশেদ আলম গাজী ও জয়পুরহাটের মো. আক্তারুজ্জামান। তাদের অ্যাকাউন্ট তলব করেছে এনবিআর। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট থেকে ফরিদপুরের সৈয়দ মির্জা হোসাইন এবং কুমিল্লার কবির আহমেদ মুমিনের অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছে।