অমিত সাহার নাম মামলা থেকে বাদ কেন, জানা নেই আবরারের বাবার

Slider জাতীয় সারাদেশ


কুষ্টিয়া: বুয়েটের নিহত মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও এ পরিবারের সদস্যদের মাঝে এখন শুধু পুত্র শোকের ছায়া নামেনি, পুরো পরিবারের মাঝে আতংক কাজ করছে। ফেইসবুক এবং মিডিয়ার বদৌলতে ফাহাদের হত্যার নির্মম ঘটনা সকলের চোখে মুখে আতংক ও ভয়ভীতি কাজ করছে।

মঙ্গলবার ফাহাদের লাশ দাফনের পর থেকেই ফাহাদের পিতা-মাতাসহ সকলেই কুমারখালীর রায়ডাঙ্গা গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে। ফাহাদের মা কিছু সময় পর পর আদরের পুত্রের শোকে চোখ পানিতে ভাসাচ্ছেন। আত্মীয় স্বজন এবং পরিবারের লোকজন ফাহাদের মাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু শান্তনা দিয়ে কি আর জম্মদাতা মাকে বুঝানো যায়? আজ বুধবার ফজর নামাজের পর ফাহাদের দাদা-দাদী, পিতা-মাতাসহ পরিবারের লোকজন ফাহাদের কবরস্থানে যায়। সেখানে যেয়ে ফাহাদের কবর জিয়ারত করে। এসময় ফাহাদের দাদা আবুল কাশেম বিশ্বাসসহ পরিবারের সকলের কান্নায় কবরস্থানের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। দীর্ঘ সময় পরিবারের লোকজন দোয়া করে চোখে পানি নিয়ে বাড়ি ফিরেন।

গোরস্থানের পাশের চায়ের দোকানে সব সময় লোকজনের আনাগোনা। এলাকাবাসী জানান-ভদ্র পরিবারের ছেলে ফাহাদকে যারা হত্যা করেছে তারা জানোয়ার, তারা শুধু ফাহাদের পিতা-মাতার কোল খালি করেনি পুরো জাতির আশাকে হত্যা করেছে। এই হত্যাকারীরা দেশের শত্রু তাদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করলে দেশে এই ধরনের আর হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটবে না।

ভোরে ফাহাদের রায়াডাঙ্গার বাড়িতে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপ হয় ফাহাদের পিতা বরকত উল্লাহ, কাকা আমিরুল ইসলাম ও প্রকৌশলী মামিরুল ইসলাম- ফাহাদের পিতা জানান-ফাহাদকে কুষ্টিয়া মিশন স্কুলে প্রথম ভর্তি করা হয়।সেখান থেকে ৬ষ্ট শ্রেণিতে প্রথমে পুলিশ লাইন স্কুল এবং পরবর্তিতে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে ভর্তি করা হয়। নিজের চেষ্টা ও মেধায় ফাহাদ ১০ শ্রেণিতে ক্লাসের প্রথম স্থান লাভ করে। পরবর্তিতে এসএসসি পরিক্ষায় যশোর বোর্ডের মধ্যে ২৬তম স্থান লাভ করেছিল। পরিবারের তেমন কোন প্রস্তুতি ছিল না যে ফাহাদকে নটরডেমে ভর্তি করাবো কিন্তু আত্মীয় স্বজনের পীড়াপিড়িতে ফাহাদ নটরডেমে ভর্তি পরিক্ষায় অংশ নেয় এবং অংশ গ্রহন করে সে প্রথম ১০০জনের মধ্যে স্থান করে ভর্তির সুযোগ পায়। নটরডেমে ভর্তির পর থেকেই ফাহাদের লেখাপড়ার আরো উন্নতি হতে থাকে। নটরডেমে পর্যায়ক্রমে ফাহাদের রেজাল্ট ভাল হতে থাকে। সে এইচএসসিতে জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ভাল সাবজেক্টে চান্স পায়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটে পরীক্ষা দিয়ে সেখানেও চান্স পায়। বুয়েটের লেজাল্ট পরে হওয়াতে ফাহাদ জামালপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। পরবর্তিতে বুয়েটের রেজাল্ট হওয়ার পর সে বুয়েটে ভর্তি হয়ে লেখাপড়ার কার্যক্রম চালিয়ে যায়। বুয়েটে লেখাপড়ার পাশাপাশি ফাহাদ টিউশনি করতো। ফাহাদের পিতা জানান- বাড়ির আশে পাশের মানুষেরা ফাহাদের সাথে তেমন মেলা মেশার সুযোগ পেত না। বাসায় ছুটিতে আসলে শুধু নামাজের সময় মসিজদে আর বাসায় বসে লেখাপড়া করতো। ফাহাদ ছোট বেলা থেকেই নামাজী ছিল। নামাজের সময় হলে তাকে কিছুই বলতে হতো না। নিজের দায়িত্বে নামাজ আদায় করতো। নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করতো।

স্কুল জীবন থেকেই শিক্ষকদের সহযোগিতায় সে তাবলিগের কাজের সাথে যুক্ত ছিল। ফাহাদের পিতা বরকতউল্লাহ বলেন, ফাহাদ বড়দের সম্মান করতো। আমাদের যথেষ্ট ভয় করতো। লেখাপড়ার ব্যাপারে তাকে বলা লাগতো না। ফাহাদের মায়ের অবদান অনেক বেশি সে ফাহাদের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস ছিল। স্কুল আর কোচিংয়ে আনা নেয়ার ব্যাপারে ফাহাদের মা অনেক কষ্ট করেছে। ফাহাদের শিক্ষকেরা ফাহাদকে খুবই সহযোগিতা করেছে। ফাহাদের মেধায় সব শিক্ষকেরা ওর প্রতি সন্তুষ্ট ছিল।

তিনি জানান-ফাহাদের মৃত্যুর খবর শুনে আমি বুয়েটে যেয়ে ছেলের লাশ নিয়ে আসি। এঘটনায় বাদী হয়ে মামলা করেছি। পুলিশ আসামি সনাক্ত করে তাদের নাম লিখে মামলার কপিতে আমার স্বাক্ষর নিয়েছে কিন্তু আমার ছেলে হত্যার ঘটনার মুল হোতা অমিত সাহার নাম নেই। অমিত সাহাকে কেন আসামি করা হয়নি এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান-আমিতো কাউকে চিনি না পুলিশ যাদের নাম লিখেছে শুধু তাদের নাম দেয়া হয়েছে। পুলিশ অমিত সাহার নাম বাদ রেখেছে।

ফাহাদের পিতা বলেন, মামলায় অবশ্যই অমিত সাহাকে আসামি যুক্ত করে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অমিতকে কেন মামলার আসামি থেকে বাদ দেয়া হলো তা আমার বোধগম্য নয়। তিনি জানান, ছেলে হত্যার মামলা চালিয়ে যাবো। জীবনের কোন ঝুঁকি আসলেও ছেলে হত্যার মামলা চালিয়ে আসামিদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনবো। ফাহাদের পরিবারের সদস্যরা আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন মা হেসেবে আমার সন্তানের হত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচার দেখতে চাবেন। তিনি এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *