লক্ষ্মীপুরে ক্ষমতাসীন দলের নামে সড়কে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ৯

Slider জাতীয়


লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে ক্ষমতাসীন দলের নামে সড়কে পরিবহন থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি হচ্ছে। চাঁদাবাজি বন্ধে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এর অংশ হিসেবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনা থেকে চাঁদা উত্তোলনের সময় হাতেনাতে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বুধবার (৯ অক্টোবর) সকালে তাদের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল ও রায়পুর থানায় দ্রুত বিচার আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিকেল ৩টার দিকে তাদেরকে লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানের পর থেকে লক্ষ্মীপুর শহরের দক্ষিণ তেমুহনী ও উত্তর তেমুহনী এলাকায় পরিবহন থেকে কোনো চাঁদা উঠাতে দেখা যায়নি। তবে রশিদের মাধ্যমে পৌরসভার নির্ধারিত টোল আদায় করতে দেখা গেছে।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, লক্ষ্মীপুর-ঢাকা, লক্ষ্মীপুর-চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর-ফেনী, রামগঞ্জ-ঢাকা, রামগতি-ঢাকা, রামগতি-চট্টগ্রাম ও রায়পুরসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে প্রতিদিন কয়েক হাজার বাস, মিনিবাস, ট্রাক, সিএনজি, লেগুনা চলাচল করে। মালিক ও শ্রমিক সমিতির নামে প্রত্যেকটি উপজেলায় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ-শ্রমিক লীগের জৈষ্ঠ্য নেতারা দৈনিক হাজিরা হিসেবে লোক নিয়োগ করে পরিবহন থেকে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ইচ্ছেমতো চাঁদা আদায় করা হয়। গত কয়েক বছরে অনেকেই পরিবহন চাঁদাবাজির টাকায় ফুলে ফেঁপে উঠেছে।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামানের নির্দেশে জেলার বিভিন্ন সড়কে চাঁদা উত্তোলনের ঘটনায় মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে অভিযান চালানো হয়। এ সময় লক্ষ্মীপুর পৌরসভা ও রায়পুর পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক চাঁদা উত্তোলনের সময় হাতেনাতে নয়জনকে আটক করা হয়েছে।

জানা গেছে, গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) আবদুল মান্নান বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় ৭ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন- লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাঞ্চানগর এলাকার মোরশেদ আলম, এনামুল হক দুলাল, চর লামছির মো. আবুল হাসেম, সাহাপুর এলাকার তোফায়েল, সমসেরাবাদের মো. সমুন, সদর উপজেলার মধ্য চর রমনী গ্রামের জাকির হোসেন ও লাহারকান্দি ইউনিয়নের চাঁদখালী গ্রামের দিদার।

এছাড়া গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) রাহেদুল ইসলাম বাদী হয়ে রায়পুর থানায় দুইজনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেছেন। তারা হলেন- রায়পুর পৌরসভার শায়েস্তানগর এলাকার মো. বিল্লাল হোসেন ও দেনায়েতপুর এলাকার মো. আবু তাহের।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে রায়পুর ও লক্ষ্মীপুরে গ্রেপ্তার পাঁচজনের স্বজনরা জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা নির্দোষ। তারা দৈনিক ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা হাজিরা হিসেবে কাজ করে। অটোরিকশা ও লেগুনা থেকে তারা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে নেতাদের নির্দেশমতে টাকা উত্তোলন করে। পরিবহন মালিক, চালক ও শ্রমিক সমিতির নামে উত্তোলন করা টাকা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতা প্রতিদিন নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোক্তার হোসেন বলেন, জেলার বিভিন্ন সড়কে চাঁদাবাজির অভিযোগে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সড়কে চাঁদাবাজি রোধে পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, আমি কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নই। চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার ও চাঁদাবাজি বন্ধে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে আমি একাধিকবার বলেছি। চাঁদাবাজের কোনো দলীয় পরিচয় নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *