ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আরবার ফাহাদ হত্যাকা-ের দেড় দিন পার হয়েছে। কয়েক দফা জানাজা শেষে লাশ দাফনও হয়ে গেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম এখনও পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আসেননি। আবরারের দাফনেও অংশ নেননি। দেখা তো দূরের কথা, কথা বলেননি আবরারের অভিভাবক, স্বজন বা সহপাঠিদের সঙ্গে। তাকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না।
যদিও শুরুতে বলা হয়েছিলো তিনি অসুস্থ। তাই তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি। কিন্তু সময় গড়িয়েছে, আর হত্যার লোমহর্ষক সব কাহিনী বেরিয়ে এসেছে, পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানীর গন্ডি পেরিয়ে আবরার রাষ্ট্র হয়ে গেছে। দলমত নির্বিশেষে ফুঁসে ওঠেছে সারাদশের ছাত্রসমাজ। দেশ ছাড়িয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। সামাজিক মাধ্যমজুড়ে আবরার বন্দনা আর ভালোবাসায় শোকাভিভূত, ক্ষুব্ধ, প্রতিবাদ মুখর মানুষ। ঘৃণার বিষবাষ্প ছুঁড়ে দিয়েছে খুনীদের প্রতি। অথচ তখনও নিবর ভিসি সাইফুল ইসলাম।
স্বয়ং ছাত্রলীগ খুনের ঘটনায় জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, বহিস্কার করেছে, শাস্তি চেয়েছে, কিন্তু সাড়া মেলেনি ভিসির। তখনও চুপ, নির্লিপ্ত তিনি। প্রয়োজন মনে করেননি ঘটনাস্থলে যাওয়ার, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার, আবরারের অভিভাবক-স্বজনদের সান্তনা দেয়ার। ফোন করে খোঁজ-খবর নেয়ার সাধারণ সৌজন্যবোধটুকুও নেই তার। ধরেননি ফোনও।
এক মায়ের সন্তান আবরার এখন লক্ষ মায়ের। আবরারের পিতার চোখের পানি গড়িয়েছে লক্ষ পিতার চোখ হয়ে। আবরার এখন আর এক পরিবারের নেই। অসংখ্য পরিবার তার, সারাদেশের ছাত্রসমাজ তার সহপাঠি, ভাই, বন্ধু। অথচ যার অভিভাবকত্বে উচ্চশিক্ষার এই বিদদ্যাপীঠে পা রেখেছিলেন আবরার, সেই ভিসির টিকিটিও পায়নি ছাত্ররা।
প্রশ্ন ওঠেছে তাহলে তিনি কোথায় আছেন? আর কেনই বা তার এই নির্লিপ্ততা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, একজন ভিসি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবক। শিক্ষার্থীরা বিপদে-আপদে তার কাছেই যাবেন। তিনিও ছুটে আসবেন তাদের দুঃসময়ে। সমাধান দিতে না পারেন, অন্তত: সান্তনার বাণী শুনাবেন, সহানুভূতি জানিয়ে ছাত্রদের পাশে থাকবেন, ব্যথিত হবেন। কিন্তু তিনি যেনো একেবারে অজ্ঞাত কোন স্থানে চলে গেছেন।
গতকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে ভিসিকে আশা করছিলেন। তার মুখ থেকে বিচারের আশ্বাস শুনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেটি আর চাওয়া নেই, হয়ে গেছে পূর্ণাঙ্গ দাবি। ঘটনাস্থলে না আসার জবাবদিহিতা। কিন্তু এরপরও আসেননি ভিসি সাইফুল।
এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে। আর এসেই তোপের মুখে পড়েন শিক্ষার্থীদের। প্রশ্নবানে জর্জরিত হন। ভিসিকে না পেয়ে শিক্ষার্থীরা সকল রাগ-ক্ষোভ উগরে দেন তার ওপর। শিক্ষার্থীরা জানতে চান, আপনি কোথায় ছিলেন? হলে পুলিশ আসলো কি করে? ইত্যাদি। এর সঠিক জবাব তিনি দিতে পারেননি। এরপরই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীদের জেরার মুখে ভিসি কোথায় আছেন তা জানেন না বলে জবাব দেন।
ভিসিকে ফোন দেন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক। কয়েকবার ফোনে বিজি পান। এরপর তার (ভিসি) ফোন বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া বলে আওয়াজ তোলেন।
তবে মিজুনুর রহমান সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্র রাজনীতি থাকার প্রয়োজন নেই। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের আশ্বাসও দেন তিনি।
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। আন্দোলনকারীরা ভিসিকে স্বশরীরে হাজির হয়ে জবাবদিহি করার জন্য বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছেন।