আজ মহাঅষ্টমী, কুমারী পূজা

Slider জাতীয়


ঢাকা: আজ মহাঅষ্টমী। ষষ্ঠী তিথিতে আমন্ত্রণ আর অধিবাসের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দেবীর বোধন পূজা। গতকাল সপ্তমী তিথির ঊষালগ্নে নবপত্রিকা স্নান শেষে চক্ষু দানের মধ্য দিয়ে প্রাণসঞ্চার করা হয়েছে দেবীর মৃন্ময়ীতে। আজ পালন হবে শারদীয়া দুর্গা উৎসবের সবচেয়ে বড় আনুষ্ঠানিকতা মহাঅষ্টমী ব্রত।

নতুন কাপড় আর বাহারি সাজে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী দুর্গাকে দেয়া হবে পুষ্পাঞ্জলি। শঙ্খ, উলুধ্বনি আর ঢাকের তালে আনন্দে মেতে উঠবে সকলে। আরাধনা করা হবে দেবী দুর্গার। হবে সন্ধি পূজা।
এই দিনেই মাতৃভাবে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে জগৎ জননীর উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করে হবে কুমারী পূজা। শাস্ত্র মতে, এদিন পূজিত কুমারী কন্যার নামকরণ করা হয় ‘উমা’। ভক্তদের মতে, এটি একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। মূলত নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা। পরদিন নবমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর মহা প্রসাদ বিতরণ করা হবে। সর্বশেষ দশমী তিথিতে দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হবে দেবী দুর্গাকে। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করতে মা আনন্দময়ী কৈলাশ ছেড়ে তার চার সন্তানকে নিয়ে এসেছেন পিতৃলোক তথা আমাদের এই মর্তলোকে। আর মায়ের এই আগমনকে ঘিরে জমে উঠেছে পূজা মণ্ডপগুলো। ষষ্ঠীর দিন থেকেই মণ্ডপগুলোতে ভক্তদের উপস্থিতিই তার প্রমাণ দেয়। গতকাল মহাসপ্তমী তিথিতে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই প্রতিমা দেখতে ভির জমিয়েছেন দর্শণার্থীরা। লাল পাড় সাদা শাড়ির পাশাপাশি বাহারি সাজে সেজে মাকে বরণ করতে এসেছেন নারী-পুরুষেরা। দেশের বাইরে থেকেও এসে যোগ দিয়েছেন অনেকে। মন্দিরের নিরাপত্তাকে ঘিরে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি উপস্থিতি। বনানী মাঠে গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের আয়োজিত দুর্গা পূজাঙ্গনে গিয়েও দেখা যায় নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্য দিয়ে মায়ের দর্শনে ছুটছে মানুষ। জমকালো আলোক সজ্জা আর কাঠামো দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো পূজাঙ্গন। এ ছাড়া কলাবাগান ক্রীড়াচক্র, খামারবাড়ি কৃষি ইনস্টিটিউটের দুর্গাপূজা মণ্ডপ, ফার্মগেট, রামকৃষ্ণ মিশন, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, শাঁখারী বাজার, পশ্চিম ধানমণ্ডির দুর্গা মন্দির, আখড়া মন্দির, ফার্মগেট, বনশ্রীসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতে আয়োজিত পূজা মণ্ডপগুলোতে দর্শনার্থীদের ভির চোখে পড়ার মতো। এদিকে, মহাঅষ্টমী তিথিতে দেবীর কুমারী পূজাকে ঘিরে মণ্ডপগুলোতে নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। মাতৃভাবে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে জগৎ জননীর উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে এই দিনে। জানা যায়, রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজার এই আয়োজন সবচেয়ে আড়ম্বরপূর্ণ হয়ে থাকে। ফুলের মালা, চন্দন ও নানা অলঙ্কার-প্রসাধন উপাচারে নিপুণ সাজে সাজানো হবে কুমারীকে।

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবারের মতো এ বছরও আমরা কুমারী পূজার আয়োজন করেছি। ৫ থেকে ৬ বছরের বালিকাকে সাজানো হবে কুমারী মাতৃকারূপে। মাতৃকাশক্তির বীজরূপা হচ্ছে বালিকা। পুণ্যার্থীরা কুমারী মায়ের সামনে প্রার্থনায় সমবেত হবেন। এ উপলক্ষ্যে রামকৃষ্ণ মিশন ও এর আশপাশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

সার্বজনীন মহানগর পূজা কমিটির প্রধান পুরোহিত রনজিত চক্রবর্তী জানান, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। সব নারীতে মাতৃত্বরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার প্রধান লক্ষ্য। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজায় উল্লেখ রয়েছে। বয়স ভেদে কুমারীর নাম ভিন্ন হয়। শাস্ত্রমতে এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কালিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে উমা, সাতে মালিনী, আটে কুঞ্জিকা, নয়ে অপরাজিতা, দশে কালসর্ন্ধভা, এগারোয় রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরোয় ক্ষেত্রজ্ঞ এবং ষোল বছরে আম্বিকা বলা হয়ে থাকে। দেশ-জাতি তথা সকল মানবকূলের শান্তি কামনায় মহাঅষ্টমী তিথিতে কুমারি কন্যা দেবীরূপে পূজিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *