বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কমিটি বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ হারানো সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম
রাব্বানী আতঙ্কে দিন পার করছেন। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে যেকোনো সময় এরাও ফেঁসে যেতে পারেন বলে আলোচনা হচ্ছে। এজন্য অনেকটা নিঃসঙ্গ দিন কাটাচ্ছেন তারা। এড়িয়ে যাচ্ছেন ঘনিষ্ঠজনদেরও। শোভন-রাব্বানীর বাসায় অনুগত নেতাদের আনাগোনা থাকলেও আগের মতো জৌলুস নেই। জানা গেছে, এ দুই নেতার চলাফেরার ওপর গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। গোয়েন্দারা এদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছেন। এদিকে, গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শেষে দেশে ফিরলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতারা।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এদিন গণভবনে গেলেও তাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শোভন-রাব্বানীর ওপর নজরদারি রয়েছে। এদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশনা রয়েছে। জানা গেছে, গত ১৪ই সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ হারান শোভন-রাব্বানী। এরপর দুই নেতাই অনেকটা আত্মগোপনে চলে যান। নিজ নিজ বাসা থেকে খুব প্রয়োজন ছাড়া বের হন না। নেতাকর্মীদেরও এড়িয়ে যান। দুই নেতা চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। যেকোন সময় ফেঁসে যাওয়ার ভয় তাড়া করছে তাদের। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে থেকেও ছাত্রলীগের পদ হারানোর পর থেকে ডাকসুতে অনুপস্থিত গোলাম রাব্বানী। নৈতিক স্খলনের দায়ে ছাত্রলীগের পদ হারানো রাব্বানীর ডাকসুর জিএস পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তিনি পদ ছাড়েননি। এমনকি তিনি ডাকসুতেও অনুপস্থিত থাকছেন।
১৪ই সেপ্টেম্বরের পর গত বুধবার প্রথমবারের মতো রাব্বানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছেন। এদিন তিনি ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ খোকনের স্মরণসভায় অংশ নেন। সূত্র জানায়, পদ হারানোর পর থেকেই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন তার কাঁঠালবাগানের বাসায় রয়েছেন। সেখানে তার সঙ্গে তার বাবা-মা ও ভাই থাকছেন। সন্তানকে মানসিকভাবে সঙ্গ দিতে কুঁড়িগ্রাম থেকে ঢাকার বাসায় ছুটে এসেছেন বাবা-মা। শোভনের কাঁঠালবাগানের বাসায় নেতাকর্মীদের আনাগোনাও কমেছে। খুব কাছের নেতাকর্মীরা ছাড়া কেউ শোভনের কাছে যাচ্ছে না। শোভনও তার অনুসারী নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান না। মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও অনেক নেতাকর্মী হতাশ হয়েছেন। শোভন ফোনও রিসিভ করছেন না। তবে গত তিন চারদিন ধরে সন্ধ্যার পর বাংলামোটর এলাকায় শোভন একান্ত অনুগত নেতাদের নিয়ে সময় কাটান। সেখানে কেউ আসলে কথা হয়। তার অনুসারী নেতাকর্মীরা মনে করেন শোভন কোনো অপরাধ করতে পারে না। তিনি ‘দাবার ঘুঁটি’ হয়ে গেছেন। এটা তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে হয়েছে। ১৪ই সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের পদ হারানোর পর শোভন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট থেকেও পদত্যাগ করেছেন। যেটি প্রশাংসা কুড়িয়েছে সকলের। অন্যদিকে, রাব্বানী এখন বেশিরভাগ সময় হাতিরপুলে তার মোতালেব প্লাজার বাসায় কাটাচ্ছেন। খুব প্রয়োজন না হলে বাসা থেকে বের হন না। সেখানে তার বাবা রয়েছেন। মাঝে কিছুদিন রাব্বানীর ছোট ভাই গোলাম রুহানী বাসায় থেকে রাব্বানীকে মানসিকভাবে সঙ্গ দিয়েছিলেন।
এখন তিনিও তার কর্মস্থলে চলে গেছেন। তবে, তার মোতালেব প্লাজার বাসায় কিছু নেতাকর্মীর আনাগোনা এখনো রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন রাব্বানীর সঙ্গে। অন্যান্য নেতাকর্মীরাও নিয়মিত যাতায়াত করছেন। তবে সেটি আগের তুলনায় অনেক কম। যারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেয়েছেন কেবল তারাই যোগাযোগ রক্ষা করছেন। রাব্বানীর অনুসারী যে সব নেতা হল পর্যায়ে রাজনীতি করেছেন তারা এখন অনেকটাই হতাশ। রাব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও সুযোগ পান না। মুঠোফোনেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে এড়িয়ে যাচ্ছেন রাব্বানী। এসব নেতাকর্মীদের অনেকে এখন রাব্বানীর প্রতি ক্ষোভও ঝাড়ছেন। অন্যদিকে দুর্নীতি অনিয়ম ও নৈতিক অধঃপতনের কারণে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ হারানোর পর রাব্বানীর ডাকসুর জিএস পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তিনি এখনো পদ ছাড়েননি। একই অভিযোগে অভিযুুক্ত কেন্দ্রীয় সভাপতির পদ হারানো রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ডাকসু মনোনীত সিনেট সদস্যের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন। কিন্তু রাব্বানী এখনো জিএস পদ ছাড়েননি। এমনকি ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ হারানোর পর থেকে তিনি ডাকসুতেও আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ভর্তি পরীক্ষার মতো বড় আয়োজনেও ডাকসুর নেতা হিসেবে রাব্বানীকে কোনো ভূমিকায় দেখা যায়নি। ১৪ই সেপ্টেম্বরের পর গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন গোলাম রাব্বানী। এদিন তিনি ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ খোকনের মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় যোগ দেন। তবে তাকে ঘিরে নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস অনেক কম ছিল। বেশির ভাগ নেতাকর্মীই নানা অপরাধে অভিযুক্ত গোলাম রাব্বানীকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এদিকে, শোভন রাব্বানীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।