সুন্দরবনের শেলা নদীতে অয়েল ট্যাংকারডুবির ঘটনায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ১৭ দিন ধরে শেলা নদীর ওই নৌরুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ফলে মংলা, শরণখোলা, কাউখালী, ঝালকাঠি রুটে তেলবাহী ও মালবাহী ৫৫০ থেকে ৬০০ লাইটারেজ জাহাজ আটকা পড়েছে। কয়েকদিন ধরে নৌরুট বন্ধ থাকায় পাঁচ হাজার নৌযান শ্রমিক অলস হয়ে বসে আছে। সমাধানের জন্য সরকারের কাছে নৌযান শ্রমিক নেতারা লিখিত আবেদন করেছেন। সরকার সমস্যার সমাধান না করলে চলতি মাসের শেষের দিকে তারা আন্দোলনে নামাতে পারে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর হাবিবুর রহমান জানান, মংলা বন্দর দিয়ে ৬০ ভাগ মালামাল নৌপথে আনা-নেয়া করা হয়। শেলা নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় এই অবস্থা তা সম্ভব হচ্ছে না।
মেসার্স (নৌযান মালিক) নুরু অ্যান্ড সন্সের মালিক এইচ এম দুলাল জানান, ‘‘নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় মংলা বন্দরের সুনাম নষ্ট হচ্ছে । বিকল্প ব্যবস্থা না করে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা ঠিক হয়নি। নৌযান মালিকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা উচিত।’’
বন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স সিরাজ শিপিং এর মালিক সেখ হেমায়েত হোসেন জানান, ‘‘কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বন্দর ব্যবহারকারিসহ সংশ্লিষ্টদের। ফলে দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের মালিকরা মংলা বন্দরে জাহাজ পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করবে।
তাই দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স হাসেম অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. জুলফিকার আলী জানান ,‘‘নৌযানের অভাবে মংলা বন্দরের ওপর পড়ছে। কার্গো জাহাজের অভাবে মালামাল ওঠানামা ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়বে সারা দেশে। ফলে পণ্যের দামও বেড়ে যাবে।” তিনি বিকল্প নৌরুট চালুর আহ্বান জানান।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার কে এম আকতারুজ্জামান বলেন, ‘‘মংলা বন্দরে আটটি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এর মধ্যে ছয়টি সারবাহী। নৌযানের অভাবে একটি জাহাজ ইতোমধ্যে পণ্য ওঠা-নামা বন্ধ করে দিয়েছে। নৌযান স্বল্পতার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই সমস্যা ক্ষণিকের জন্য।’’
বিসিআইসি মংলা ট্রানজিট গুদাম ইনচার্জ মো. শহীদুল ইসলাম বিশ্বাস জানান, বৃহত্তর বরিশাল ও রাজশাহী অঞ্চলে ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হয় মংলা বন্দর দিয়ে। এ বন্দরের জাহাজ থেকে লাইটারে করে সব ধরনের সার পরিবহন করা হয় নদীপথে। বরিশাল, ভোলা, টেকেরহাট, বাঘাবাড়ী, আশুগঞ্জ, কাঁচপুর, আমিনবাজার ও ঘোড়াশালসহ বিভিন্ন নৌঘাটে লাইটার জাহাজ থেকে সার খালাস করা হয়।’
অপরদিকে মংলাস্থ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কাশেম মাস্টার সুন্দরবনের শেলা নদীর নৌরুট খুলে দিয়ে, আটকে পড়া নৌযান শ্রমিকদেন দুঃসহ জীবন থেকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
একই সঙ্গে দুর্ঘটনায় নিহত ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ এর মাস্টার মোখলেসুর রহমানের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা এবং আটক ওটি টোটালের মাস্টার মোস্তফা, কর্মচারী ফারুক, আক্কাস ও পিয়ার আলীর মুক্তির দাবি করেন তিনি। এজন্য সোমবার সচিবালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে এ আবেদন জানান তারা।
গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শেলা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ওটি সাউদান স্টান -৭ সাড়ে ৩’শ মেট্রিকটন ফার্নেস তেল নিয়ে ডুবে যায় । পরে ১১ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শেলা নদীতে দিয়ে সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।