মানিকগঞ্জ: নদীতে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া এবং রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ আছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে এই নৌপথে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ আছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী এবং যানবাহনের শ্রমিকেরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০-১২ দিন ধরে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে যায়। পানি বাড়ার সঙ্গে নদীতে স্রোতও বেড়ে গেছে। এ কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে এই নৌপথে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হতে থাকে।
স্রোতের প্রতিকূলে যানবাহন পারাপার করতে গিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ আগে তিনটি ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হয়ে পড়ে। এরপর ওই ফেরিগুলো এখানকার ভাসমান কারখানায় নোঙর করে রাখা হয়। এ ছাড়া আরও তিনটি ফেরি ইঞ্জিন দুর্বলতার কারণে স্রোতের প্রতিকূলে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলেও যাত্রীদের ভোগান্তির কথা ভেবে বাকি ১৩টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হয়। তবে থেমে থেমে চলা যানবাহনের কারণে পারাপারে ভোগান্তি হয় যাত্রীদের।
ইতিমধ্যে দৌলতদিয়া প্রান্তে ১ এবং ২ নম্বর ফেরিঘাট ভেঙে গেছে। বাকি ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ঘাটের মুখে নদীতে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ঘূর্ণিপাকের সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে এ ফেরিগুলো যাত্রী এবং যানবাহন নিয়ে ওই তিনটি ঘাটেও ফিরতে পারছে না। এতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে আজ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে, শুধুমাত্র বনলতা নামে ছোট একটি ফেরি দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সগুলো পারাপার করা হচ্ছে। এই ফেরিট দৌলতদিয়া ৬ নম্বর ঘাটে যাচ্ছে।
আজ দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া ৩ এবং ৪ নম্বর ঘাটে ৮টি ফেরি নোঙর করে রাখা হয়েছে। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া যাত্রীরা। পাটুরিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে চরের ডাঙা পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রীবাহী বাসগুলো দীর্ঘ সারিতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। শিশু ও নারী যাত্রীদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার শাখারিয়া গ্রামের শ্রীকান্ত দাস ফলের ব্যবসা করেন ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায়। পূজা উপলক্ষে সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য আজ সকাল ৬টায় গাবতলী থেকে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের বাসে ওঠেন তিনি। সকাল ৯টায় পাটুরিয়া ঘাটের চরের ডাঙা এলাকায় এসে বাসটি আটকা পড়ে। পাঁচ ঘণ্টায় তাঁর বাসটি এখনো ফেরিতে উঠতে পারেনি। তাঁর মতো আরও অনেক যাত্রী পরিবার নিয়ে এমন নাজেহাল হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের যোগাযোগের অন্যতম পথ হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ। এ নৌপথে নৌচলাচল বন্ধ থাকায় এসব জেলার সঙ্গে নৌযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
স্থানীয় শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চ মালিক সমিতির এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ফেরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে যথাযথ দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জিল্লুর রহমান বলেন, নদীতে তীব্র স্রোত, দৌলতদিয়া প্রান্তে নদী ভাঙনে ঘাট বিলীনসহ মূলত প্রাকৃতিক সমস্যার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে, গতকাল সন্ধ্যা থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ রয়েছে। লঞ্চ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই নৌপথে ২৩টি লঞ্চ দিয়ে শুধুমাত্র যাত্রী পারাপার করা হয়। প্রচণ্ড স্রোতের মধ্যে নৌদুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পাটুরিয়া লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম খান বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটের এই অবস্থায় লঞ্চ চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।