বিনোদন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বরাবর খোলা চিঠি লিখেছিলেন ভারতের ৪৯ জন বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। সেই চিঠিতে তাঁরা ভারতজুড়ে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও গণপিটুনি বন্ধের দাবি করেন এবং ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বার্তা ছড়ানোর প্রতিবাদ করেন। এরপর গত ২৭ জুলাই বিহারের আইনজীবী সুধীর কুমার ওঝা মুজাফফরপুরের সদর পুলিশ স্টেশনে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, মণি রত্নম, শ্যাম বেনেগাল, অনুরাগ কাশ্যপ, শোভা মুদগাল, রামচন্দ্র গুহসহ এই ৪৯ জন বরেণ্য ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ করেন। তখন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সূর্যকান্ত তিওয়ারি তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
সুধীর কুমার ওঝা অভিযোগ করেছেন, দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটানো এবং বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন এই ৪৯ জন নাগরিক। দেশদ্রোহের পাশাপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত এবং দেশের অখণ্ডতা ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি এই মামলায় সাক্ষী হিসেবে কঙ্গনা রনৌত, মধুর ভান্ডারকর, বিবেক অগ্নিহোত্রীর নাম উল্লেখ করেছেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পাঠিয়ে বিজেপি আর দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের রোষানলে পড়েন দেশের ৪৯ জন বরেণ্য ব্যক্তিত্ব।
এর পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সমর্থন করে দেশের ৬১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি তাঁকে পাল্টা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন পর্নো মিত্র, কাঞ্চনা মৈত্র, মিলন ভৌমিক, অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মধুর ভান্ডারকর, বিবেক অগ্নিহোত্রী, প্রসূন যোশী, সোনাল মানসিং, পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভট্টর প্রমুখ।
তাঁদের মতে, দেশের একতা ও সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার জন্য এই চিঠি লিখেছেন দেশের ৪৯ জন ‘স্বঘোষিত অভিভাবক’। আন্তর্জাতিক মহলে সরকারের ভাবমূর্তি খারাপ করার উদ্দেশ্যে তাঁরা কাজ করছেন। তাঁরা আরও লিখেছেন, ‘মাওবাদী হামলায় যখন মানুষের মৃত্যু হয়, সিআরপিএফ জওয়ানদের প্রাণ যায়, তখন তাঁরা চুপ থাকেন। সন্ত্রাসবাদী হামলায় কাশ্মীরে যখন রক্ত ঝরে, তখন তাঁরা মুখ খোলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন দেশবিরোধী স্লোগান উঠেছে, তখনো তাঁদের কিছু বলতে শোনা যায়নি।’
অভিনেতা ও নির্মাতা কৌশিক সেন আর অনুরাগ কাশ্যপকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এরপর মোদিপন্থীদের কটাক্ষ করে অপর্ণা সেন বলেছেন, ‘এত ভয়! মাত্র ৪৯ জন চিঠি দিল, তাতেই দুটো প্রাণনাশের হুমকি চলে এল! আমার হাসি পাচ্ছে। তার মানে কোথাও গিয়ে তাদের আঁতে ঘা লেগেছে।’
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমার বক্তব্য চিঠিতে স্পষ্ট করে বলেছি। তাতে কার আপত্তি হলো, কে কী বলল, তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। তারা আগে নিজেদের ঘর সামলাক।’
এ পরিস্থিতে কবি শঙ্খ ঘোষ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে শুভচিন্তাসম্পন্ন লোকজন চিঠিটা দিয়েছিলেন, সেটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। তবে তার পালটা হিসেবে পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে চিঠি গিয়েছে, তা পুরোপুরি রাজনৈতিক স্বার্থে। প্রথম চিঠিতে বাংলার যাঁরা সই করেছিলেন, তাঁরা তো শুধু পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা নিয়ে কথা বলেননি, তাঁরা গোটা দেশে ঘটে চলা অনাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।’