সিলেট: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘উন্নয়নের রোল মডেলে এখন ঘরে ঘরে ক্যাসিনো। আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে জুয়ার আসর। দেশের মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিন সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষ মারা যাচ্ছে। সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়াচ্ছে। সরকারের সবাই লুটেরা। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুট হচ্ছে। এ অবস্থায় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হোন।’
আজ মঙ্গলবার সিলেট নগরের রেজিস্টারি মাঠে বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব এ কথা বলেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে এক সপ্তাহের প্রচারণা ছিল সিলেট বিভাগের চার জেলায়। সমাবেশস্থল সিলেট নগরের রেজিস্টারি মাঠের মঞ্চ গতকাল সোমবার দিনে ও রাতে তিনবার পুলিশ ভেঙে দেয়। সমাবেশের আগে আজ সকালে নতুন করে আবারও মঞ্চ প্রস্তুত করে বেলা দুইটায় খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন নেতা-কর্মীরা। তবে উপস্থিতি ছিল কম। বেলা তিনটায় শুরু হয় সমাবেশ।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশের শুরুতে স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য শোনেন কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ, মো. শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও সাখাওয়াত হাসান জীবন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, গত জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর, নগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সুনামগঞ্জ-৫ আসনের প্রার্থী মিজানুর রহমান চৌধুরী বক্তব্য দেন। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ ও নগরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শামীম সিদ্দিকী।
প্রধান অতিথির বক্তৃতার শুরুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমাবেশে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই মঞ্চ অনেক ছোট। আমাদের অসুবিধা হচ্ছে। তিনবার এই মঞ্চ ভাঙা হয়েছে। সিলেটের জনগণের ঐকান্তিক চেষ্টায় সকালে মঞ্চটি তৈরি করে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য এই সমাবেশ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সমাবেশ চলাকালে কিছুক্ষণ আগে একটি পুলিশের গাড়ি গেছে। সেই গাড়িতে সবাই ছিল আমাদের কর্মী। তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এসব করা হয়েছে ভয় থেকে। এই সভা নিয়ে তাদের ভয় ছিল। এই সরকার আসলে কোনো সরকার না। তারা এখন সবকিছুতে ভয় পায়। আগের রাতে ভোট ডাকাতি করেছে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নিয়ে নয়, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে। বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় আছে।
সরকার নিয়ন্ত্রণহীন
সরকার নিয়ন্ত্রণহীন দাবি করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা হচ্ছে। পার্লামেন্ট নেই, গৃহপালিত বিরোধী দল দিয়ে এই পার্লামেন্ট কোনো কাজ করছে না। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ দলীয়করণ করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণ দলীয়করণ। ১২ বছর ধরে জুয়া চলছে, সেগুলো দেখে না পুলিশ, দেখে শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। জনগণের সরকার নয় বলে এক এক করে সমস্ত অর্জন ধ্বংস করে দিচ্ছে।’
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও সরকার ব্যর্থ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গারা দুই বছরের বেশি সময় ধরে এ দেশে আছে। একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে পারেনি সরকার। অথচ ১৯৭৮ সালে জিয়া সরকার ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল।’
সিলেটের ‘নিখোঁজ’ নেতা এম ইলিয়াস আলীকে সবচেয়ে বিপ্লবী ও সাহসী নেতা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শত শত পরিবার চোখের পানি ফেলছে। গুম হওয়া নেতা-কর্মী কেউ ফিরছে না। আমাদের সবচেয়ে সাহসী ও বিপ্লবী নেতা ইলিয়াস আলী, ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারকে গুম করা হয়েছে। এক–দুজন নয়, ২৬ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। তাই আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ নেই, আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হোন।’
সরকার এখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে উল্লেখ করে সমাবেশে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিচার সরকারের নির্দেশে চলে। তাই খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকার দেবে না। বিএনপি দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র উপহার দিয়েছে। আওয়ামী লীগ করেছে ভোট ডাকাতি। ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ ডিসেম্বর ডাকাতি হয়ে গেছে। সরকার এখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ছাত্রলীগের দুই নেতা ৮৬ কোটি টাকার চাঁদাবাজি করেছে। এসবের পেছনে কারা আছে, দেশের মানুষ নাম জানতে চায়।’
আন্দোলনই খালেদার মুক্তির একমাত্র পথ
আন্দোলনই খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ বলে মনে করেন মওদুদ আহমদ। বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘এখন গণতন্ত্রের আরেক নাম খালেদা জিয়া। তাঁর মুক্তির একমাত্র পথ এখন রাজপথ। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদাকে মুক্ত করতে হবে। এই পথে খালেদা জিয়ার মুক্তি মানে হলো গণতন্ত্রের মুক্তি।’
‘আগে হাসিনার পতন, পরে খালেদার মুক্তি’—এই স্লোগানে আন্দোলন গড়ার আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘নেত্রী মুক্তি পাচ্ছেন না, জামিনও পাচ্ছেন না। তার একটিই কারণ, শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন, তবে এই মুক্তি শেখ হাসিনা দিতে পারবেন না। তাই হাসিনাকে আগে বিদায় করতে হবে।’
ঢাকায় জুয়া-ক্যাসিনো প্রসঙ্গ বিভিন্ন বক্তার মুখে ছিল। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান রাজধানী ঢাকায় যুবলীগের জুয়ার আসরে কোটি কোটি টাকা লুটপাট বিষয় তুলে ধরে বলেন, ‘এই সরকারের গায়ে মদ-জুয়ার গন্ধ। গন্ধ থেকে মুক্তি নিতে হবে।’
ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘ঢাকায় থাকার কোনো পরিবেশ নেই। যুবলীগ-ছাত্রলীগ ঢাকাকে নষ্ট করে ফেলেছে, ঢাকাকে জুয়ার আসরে বানিয়েছে।’