কমিশন ভাগাভাগি: ২০ কর্মকর্তার গাঢাকা

Slider জাতীয় টপ নিউজ


ঢাকা: জি কে শামীম ইস্যুতে লাপাত্তা সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে ২০ কর্মকর্তা। তারা কোথায় আছেন পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউ জানেন না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এগুচ্ছেন তারা। অতীত ঘুষ এখন গলার কাঁটা হয়ে যায় কিনা এনিয়ে চিন্তায় আছেন গণপূর্তসহ বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা এসব কর্মকর্তা। দুর্নীতি দমন কমিশন ও র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে তারা নিজেদের আড়াল করে রাখছেন। নিজেদের ফোন বন্ধ রেখেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী টিপু সুলতান ও রফিকুল ইসলাম ঠিকাদার জিকে শামীমের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছেন। পাশাপাশি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আক্তারুজ্জামান জিকে শামীমের সব কাজে বৈধতা দিতে কার্পন্য করতেন না। শামীম গ্রেপ্তারের পর থেকে এ তিন কর্মকর্তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক দুই প্রকৌশলী সর্ম্পকে বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, প্রধান প্রকৌশলী পদে রফিকুল ইসলাম থাকার সময় তার প্রধান সহযোগি ছিলেন, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাই। তাদের সিন্ডিকেটে ছিলেন বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী। রফিকুল ইসলাম সরাসরি ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন আদায় করতেন। গুরুত্বপূর্ণ জোনের দায়িত্ব পালনকারি সব নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকেও প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিতে হতো রফিককে। ঠিকাদারি কাজ দিতে তিনি আগে থেকেই তিন থেকে ১০ শতাংশ কমিশন নিতেন। এর বাইরে অন্য প্রকৌশলীরা যে কমিশন পেতেন, তাদের কমিশনেও ভাগ বসাতেন রফিকুল ইসলাম। নিজে প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব ছাড়ার আগে একদিনে সবচেয়ে বেশি বদলির রেকর্ড করে গেছেন তিনি। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, নিজের অবৈধ অর্থ দিয়ে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ টি বিভিন্ন আয়তনের প্লট কিনেছেন রফিকুল ইসলাম। ৩০০ ফুট রাস্তার উপর প্লট থাকলে দাম দর না করেই কিনে ফেলতেন তিনি। রাজউকের এক কর্মকর্তা জানান, তার দুই স্ত্রী। তাই স্ত্রী ও সন্তানদের নামেই বেশি প্লট কিনেছেন তিনি। মাঝেমধ্যে পরিবারের সদস্যরা প্লট কেনার জন্য রাজউকে হাজিরা দিতে আসতেন। এদিকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে টিপু সুলতান ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)- এর প্রধান প্রকৌশলী। ওই সময় রাজউকে টেন্ডারবাজির বীজ রোপন করেন টিপু সুলতান। সন্ত্রাসী পরিবেষ্ঠিত হয়ে অফিস করতেন সাবেক এ প্রধান প্রকৌশলী। এজন্য নিজ দপ্তরে আনসার নিয়োগ করেন তিনি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, নিজের নিরাপত্তার খাতিরে আনসার নিয়োগ করা প্রয়োজন। ওই সময় বিষয়টি রাজউকের কর্মকর্তাদের মধ্যে মুখরোচক আলোচনার জন্ম দেয়। রাজউকে টেন্ডার ভাগাভাগিতে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পান টিপু সুলতান। এ সময় জিকে শামীমের সঙ্গে তার সখ্যতার বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। এদিকে, জিকে শামীম গ্রেপ্তারের পর পরই রফিকুল ইসলাম ও টিপু সুলতান গা ঢাকা দিয়েছেন। ফোন বন্ধ রয়েছে তাদের। গণপূর্ত অধিদপ্তরের বর্তমান অন্য প্রকৌশলীরা ভয়ে আছেন। অনেকে ফোন বন্ধ করে রেখেছেন, অনেকে অপরিচিত নম্বরের ফোন ধরছেন না। এমনকি গণপূর্ত অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটটিও তারা বন্ধ করে দিয়েছেন। কেউ কর্মকর্তাদের ফোন নম্বর পেয়ে যেন ফোন দিতে না পারেন এজন্য এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাই এবং দুই দফা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (ইঞ্জিনিয়ারিং) পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া এসএএম ফজলুল কবির ঠিকাদার শামীমের অন্যতম সুবিধাভোগী ছিলেন। এদের মধ্যে ফজলুল কবির এখনও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে কাজ করছেন।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, জিকে শামীম গ্রেপ্তারের পর ফজলুল কবির চুপসে গেছেন। রোববার অফিসে কিছু সময়ের জন্য এসেই হাওয়া হয়ে যান। গতকালও অফিস করেননি এ কর্মকর্তা। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, সদস্য (প্রকৌশল) ফজলুল কবির ২০০৩ সালে মহাজোট সরকারের আমলে বেশ সুবিধাভোগী কর্মকর্তা ছিলেন। ওই সময় তিনি ছিলেন সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী মীর্জা আব্বাসের আস্থাভাজন কর্মকর্তা। তাই জিকে শামীম ওই সময় থেকেই ফজলুল কবিরের ঘনিষ্ঠ বনে যান। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, এসএএম ফজলুল কবিরের দুই দফা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার পেছনে জিকে শামীমের হাত রয়েছে। কারন এ নিয়োগ পেতে যত ধরনের অর্থায়ন সবই তিনি করেছেন। বিনিময়ে জিকে শামীমের সঙ্গে মিলেমিশে ট্টপিক্যাল হোমসকে কম দামে জমি দেয়াসহ সব কিছুর প্রক্রিয়া করেন ফজলুল কবির। ফজলুল কবিরের জড়িত থাকার বিষয়টি জানতে চাইলে তাকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এদিকে, সুবিধাভোগী এসব কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্য কর্মকর্তারাও গত দুই দিন অফিস করেননি। ঘনিষ্ঠদের বলেছেন, পরিস্থিতি ঠান্ডা হলেই তারা অফিস করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *