ঢাকা: বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ হারানো গোলাম রাব্বানীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্যপদ থেকে অপসারণ বা পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। এই দাবিকে ‘ভিত্তিহীন’ আখ্যা দিয়ে রাব্বানী বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের বিষয়টির সঙ্গে ডাকসু বা সিনেটের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই ডাকসু থেকে পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না।’
আজ সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্যপদ থেকে ছাত্রলীগের পদচ্যুত সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরীর পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর সন্ধ্যায় বলেন গোলাম রাব্বানী। ছাত্রলীগের পদ হারানোর পর থেকে বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ও ডাকসু ভিপি নুরুল হক ডাকসু ও সিনেট থেকে রাব্বানীর পদত্যাগ দাবি করে আসছেন।
ডাকসু বা সিনেট থেকে পদত্যাগ করবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। পদত্যাগ কেন করব? ডাকসু বা সিনেট থেকে আমার পদত্যাগের দাবিটি খুবই লেইম। এই দাবির ভিত্তি কী?’
রাব্বানী দাবি করে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র হয়েছে, যা ইতিমধ্যে পরিষ্কার হয়েছে। নেত্রীর কাছে কিছু বিষয় গিয়েছে, তিনি কষ্ট পেয়েছেন। সেই জায়গা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নেত্রীর মনে কষ্ট দিয়ে আমরা ছাত্রলীগ করব না। এই জায়গা থেকে আমরা ছাত্রলীগের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। আমরা অপরাধী নই, আমাদের বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে, আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। পরিবারকে বাঁচাতে গিয়ে ছাত্রলীগের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন উপাচার্য। এর সঙ্গে ডাকসু থেকে পদত্যাগ করার কোনো সম্পর্ক নেই।’
ডাকসু ভিপি নুরুল হক বলেছেন, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে ছাত্রলীগের পদ হারানোর পর রাব্বানী ডাকসুর জিএস পদে থাকার বৈধতাও হারিয়েছেন। জানতে চাইলে রাব্বানী বলেন, ‘হু ইজ নুরুল? নুরুল কে?’
রেজওয়ানুল হকের সিনেট সদস্যপদ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘রেজওয়ানুল ডাকসুতে নির্বাচিত ছিলেন না, ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে আমরা সম্মিলিতভাবে তাঁকে সিনেটে নিয়ে এসেছিলাম। নেত্রীর মনে কষ্ট দিয়ে তিনি অনুতপ্ত, সে নিজের জায়গা থেকে পদত্যাগ করেছে। এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে তিনি অন্যায় করেছেন। যেসব অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, একটাও প্রমাণ হয়নি, হবেও না। কারণ আমরা এ ধরনের কিছু করিনি। পত্রপত্রিকায় যা এসেছে, কোনোটিরই দালিলিক তথ্য-প্রমাণ নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে ‘ঈদের খরচ’ হিসেবে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও গোলাম রাব্বানী ‘ন্যায্য পাওনা’ চেয়েছিলেন বলে যে বলা হচ্ছে তা সত্য নয় বলে দাবি করেছেন রাব্বানী। তাঁর কথাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘উপাচার্য ছেলেপেলেদের যখন টাকা দিয়েছিলেন, তখন বলা হয়েছিল ঈদের বোনাস হিসেবে টাকাটা দেওয়া হয়েছে। এটি আমাদের কানেও আসে। তখন আমি আর শোভন ম্যামের কাছে গিয়ে (ছাত্রলীগের পদচ্যুত সভাপতি) হাসতে হাসতে বললাম যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখাকে ঈদের খরচ দিলেন, আমাদের খরচ কই? বঙ্গবন্ধু যেমন বলেছিলেন, সাড়ে সাত কোটি কম্বল এল, আমার কম্বলটা গেল কই- সে রকমভাবেই কথাটা বলেছিলাম। এটা ছিল মজা করে বলা। আমার কথাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।’
জাহাঙ্গীরনগরে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কেন দেখা করতে গিয়েছিলেন, তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন ছাত্রলীগের পদচ্যুত সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তাঁর ভাষ্য, ‘জাহাঙ্গীরনগরে আমরা গিয়েছিলাম দুটি কারণে। এক, জাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিতর্কিত করে হারানোর কোনো প্ল্যান কি না- এটা জানতে। দুই, উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়টির সঙ্গে ছাত্রলীগের নামটা কেন এল- এটা জানতে। যখন আমরা উপাচার্য ম্যামকে বললাম যে এর সঙ্গে আপনার স্বামী ও ছেলের সংশ্লিষ্টতার কথা বলছেন, তখন সেই বিষয়টিকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে তিনি আপার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে আমাদের নামে কিছু কথা বলেছেন। তবে তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। অথচ যাঁরা টাকা নিয়েছেন, তাঁরাই বলেছেন যে উপাচার্যের স্বামী ও ছেলে এর সঙ্গে জড়িত।’
রাব্বানীর বিশ্বাস, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি ‘ক্লিয়ার’ হলে ‘সবকিছু আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে।’