ঢাকা: ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদচ্যুত করা প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এটা প্রমাণ করে যে দুর্নীতি কোন পর্যায়ে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কী হারে দুর্নীতি চলছে। এটা শুধু একটা। যেটাতে একটা সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, দেশের প্রধানমন্ত্রী বহিষ্কার করেছেন। এটা সারা দেশের চিত্র। এটা প্রমাণ করে যে দুর্নীতি কোন পর্যায়ে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে।’ তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা প্রমাণ হয়ে গেছে, আওয়ামী লীগের সবাই মিলে দুর্নীতি করছে। ছাত্রসংগঠন থেকে বহিষ্কার-প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব জানান, একেকটি সংগঠনের একেক রকম গঠনতন্ত্র আছে।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘অংশীদারত্ব’ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই, অংশীদারত্ব তো দূরের কথা।’ তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র বলতে শুধু নির্বাচনকে বোঝায় না, গণতন্ত্র বলতে পুরো ব্যবস্থাকে বোঝায়। তা নির্ভর করে রাষ্ট্রের নির্বাচনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসনব্যবস্থা, গণমাধ্যমসহ সবকিছুতেই গণতান্ত্রিক চেতনা থাকতে হবে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছরে এসে মানুষ গণতন্ত্রের শূন্যতায় অবস্থান করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা গণতন্ত্রকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন—উদার গণতন্ত্র, নির্বাচনী গণতন্ত্র, নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্র ও রুদ্ধদ্বার স্বৈরতন্ত্র। বাংলাদেশে এখন নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্র চলছে। নির্বাচন হচ্ছে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী এবং নিজের মতো করে তারা স্বৈরতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করছে।
বাংলাদেশে কথা বলার স্বাধীনতা, মৌলিক রাজনৈতিক অধিকার, সুশাসন, নিশ্চিত জীবনের নিরাপত্তা নেই উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক নৈরাজ্য চলছে। বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন চলছে। নিজ দলের লোকদের ওপর মামলা, নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ অবস্থায় আমরা গণতন্ত্র দিবস পালন করতে এসেছি। এ চেয়ে ব্যঙ্গাত্মক কিছু হয় না।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগই এ ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করেছিল, কিন্তু ক্ষমতায় এসে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে তা তুলে দেয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতিসংঘ আজ বাংলাদেশ সরকারকে প্রশ্ন করুক যে এই দেশ তাদের সর্বজনীন মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী হয়েও কীভাবে এ ধরনের একটি সরকারব্যবস্থা চালু রেখেছে।’ মানবাধিকার সনদের কিছুই মানা হচ্ছে না বলে দাবি করে ফখরুল বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মির্জা ফখরুল বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনও তুলে ধরেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশে কোনো বিরোধী দল নেই। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ মনে করছে, তারা বাংলাদেশের একক শক্তি। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দিয়ে ছাত্রদলের কাউন্সিল ও নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে দুই আইন চলছে। সরকারদলীয়দের জন্য এক আইন এবং বিরোধী দলের জন্য আরেক আইন। তিনি জানান, দেশে এক আইন থাকলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকার সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নামে যেসব মামলা হয়েছিল, তার জন্য তাঁকে ‘ট্রায়াল ফেস’ করতে হতো।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।