ঢাকা: ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ছাত্রলীগ কোনো অন্যায়কারী, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজকে প্রশ্রয় দেবে না। কেউ চাঁদাবাজি করে ছাত্রলীগের দুর্নাম করছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবেন।
সাম্প্রতিক নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে গতকাল শনিবার বাদ দেওয়া হয়। তাঁদের পরিবর্তে গতকাল রাতেই জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল নাহিয়ান খানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্বভার গ্রহণের পর আজ রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আল নাহিয়ান খান ও লেখক ভট্টাচার্য।
আল নাহিয়ান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাদের ছাত্রলীগের দায়িত্ব দিয়েছেন। এই মুহূর্তে এটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা মনে করি, যত চ্যালেঞ্জই আসুক, সব মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।’
ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দিকনির্দেশনা দেবেন, সেভাবেই আমরা চলব। যথাযথভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করব। অন্য যেসব বিষয় আছে, সেগুলো আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে করব।’
আল নাহিয়ান খান বলেন, ‘ছাত্রলীগকে পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে। আমরা বসে সার্বিক একটা পরিকল্পনা করব, ছক আঁকব ৷ সেই ছক অনুযায়ী বাকি যে ১০ মাস সময় আছে, আমাদের যেসব কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে বা যেসব কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে, সেগুলো বিলুপ্ত করে সুন্দর ও যুগোপযোগী ছাত্রলীগ গড়ে তুলব ৷ কোনো ধরনের কালিমা আমাদের গায়ে যেন না লাগে, সে জন্য আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকব।’
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা দুজন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে গতকাল দায়িত্ব পেয়েছি। সামনের ১০ মাসের জন্য আমাদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কাল সোমবার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর আনুষ্ঠানিকভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করব। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে আমাদের কর্মপরিকল্পনা নির্দিষ্ট করব।’
কিছুদিন ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজ থেকে কমিশন দাবি, টাকার বিনিময়ে কমিটিতে পদ দেওয়া, অবৈধভাবে ক্ষমতা প্রদর্শনসহ রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সামনে আসে। ৭ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের এক সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই ছাত্রলীগের এই দুই নেতার ভবিষ্যৎ নিয়ে দলে নানা আলোচনা শুরু হয়।
গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ছাত্রলীগের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পায়। সভায় উপস্থিত সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি উল্লেখ করে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা দুই শীর্ষ নেতাকে বাদ দেওয়ার কথা বলেন। এ সময় তিনি তাঁদের পদত্যাগ করার নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি আল নাহিয়ান খান ও লেখক ভট্টাচার্যকে নতুন দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। তাঁরা যাতে সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী নেতৃত্ব ঠিক করেন, সে কথাও বলেন।