নয়াদিল্লি: শুধু আসাম নয়, ভারতের কোনো রাজ্যে একজন বিদেশিরও স্থান হবে না। সব জায়গা থেকে অবৈধ অভিবাসীকে উচ্ছেদ করা হবে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ সোমবার উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে আরও একবার এই কথা বললেন।
গতকাল রোববার দুই দিনের সফরে নর্থ ইস্টার্ন কাউন্সিলের বৈঠকে যোগ দিতে আসাম আসেন অমিত শাহ। আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তালিকা (এনআরসি) প্রকাশের পর এই তাঁর প্রথম আসাম সফর। গতকালই তিনি বলেছিলেন, কোনো অবৈধ অভিবাসীকে এ দেশে থাকতে দেওয়া হবে না। সোমবার তিনি এক ধাপ এগিয়ে বলেন, ‘ছোট রাজ্যগুলোর ধারণা, আসাম থেকে তাড়া খেয়ে অবৈধ অভিবাসীরা ওই সব রাজ্যে ঘাঁটি গাড়ছে। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না। আমরা গোটা দেশকেই অনুপ্রবেশকারীমুক্ত করতে বদ্ধপরিকর।’
অমিত শাহ বলেন, ‘আমাদের একটা পরিকল্পনা রয়েছে। সব রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে তাদের সাহায্যে আমরা সেই পরিকল্পনা কায়েম করব।’
আসামে এনআরসি তৈরি করা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। ১৯৮৫ সালে সই হওয়া আসাম চুক্তিতেই এনআরসি তৈরির কথা ছিল। ঠিক হয়েছিল, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ রাত ১২টার আগে যাঁরা রাজ্যে বসবাস করার প্রমাণ দাখিল করতে পারবেন, তাঁদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত চুক্তির ওই ধারা বলবৎ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু শাসক দল বিজেপি এককদম এগিয়ে সারা দেশে এনআরসি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে। আসামের এনআরসি নিয়ে বিতর্ক তীব্র। রাজ্যের বিজেপি নেতারা এনআরসি খারিজ করেছেন যেহেতু অনাগরিক হিসেবে মুসলমানদের তুলনায় হিন্দুদের সংখ্যা বেশি। রাজ্য নেতাদের সেই অখুশি ও অসন্তোষ সত্ত্বেও অমিত শাহ প্রকারান্তরে দেশের সব রাজ্যে এনআরসি করার কথা শুনিয়ে রাখলেন।
নর্থ ইস্টার্ন কাউন্সিলের সদস্য দেশের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো। আসামের লাগোয়া রাজ্য মেঘালয়ের আশঙ্কা, আসাম থেকে তাড়া খেয়ে বহু অবৈধ অভিবাসী ওখানে গিয়ে ঠাঁই নিয়েছে। কাউন্সিলের বৈঠকে সেই আশঙ্কা পুরোপুরি দূর করে দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘আমরা তা কিছুতেই হতে দেব না। গোটা দেশকেই আমরা অনুপ্রবেশকারী মুক্ত করব। এটা আমাদের প্রতিশ্রুতি।’
এই সঙ্গে অন্য একটি আশঙ্কাও তিনি দূর করে দিতে চেয়েছেন। অমিত শাহ বলেছেন, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে দেওয়া হলেও ৩৭১ ধারা ও তার কোনো অনুচ্ছেদ খারিজ করা হবে না। এই প্রসঙ্গে তিনি প্রধানত উপজাতি–অধ্যুষিত রাজ্যগুলোকে আশ্বস্ত করে বলেন, সরকার নাগরিকত্ব বিলে যে সংশোধন আনতে চাইছে তা যাতে উপজাতিদের কোনো আইন লঙ্ঘন না করে তা দেখা হবে। নাগরিকত্ব বিলে সংশোধন এনে বিজেপি সরকার চাইছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে চলে আসা অমুসলিম সম্প্রদায়দের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে। আসামের বহু মানুষের ধারণা, আসামে অনাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হওয়া হিন্দুদের বিজেপি ওই প্রক্রিয়ায় ভারতীয় নাগরিক বলে গণ্য করবে। তেমন হলে শুধু মাত্র মুসলমান অনাগরিকরাই অবৈধ অভিবাসী বলে গণ্য হবেন। আসামে চূড়ান্ত এনআরসি তালিকায় যে ১৯ লাখ মানুষের নাম নেই, তার মধ্যে রয়েছে ১২ লাখ হিন্দু, বাকিরা মুসলমান।
বিজেপি সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন নির্বাচনী জনসভায় অমিত শাহসহ অন্য নেতারা অবৈধ অভিবাসীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ওপর জোর দিতেন। গুয়াহাটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এসে অমিত শাহ কিন্তু একবারের জন্যও অবৈধ অভিবাসীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা উল্লেখ করেননি। স্পষ্টতই, কূটনৈতিক জটিলতা এড়ানোই ছিল লক্ষ্য। বিশেষত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী মাসের গোড়ায় যখন দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতে আসছেন। বাংলাদেশকে ভারতও একাধিকবার জানিয়েছে, আসামের এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। গত মাসে ঢাকা সফরে গিয়ে একই কথা বলে এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।