সোমা টি প্রসেসিং কারখানা লো ভোল্টেজে বন্ধ

Slider অর্থ ও বাণিজ্য বাংলার মুখোমুখি


হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ২০০৬ সালে শাহানাজ বেগম সোমা ও ফেরদৌস আলম দম্পতির একক প্রচেষ্টায় উপজেলা পূর্ব বিছনদই গ্রামে গড়ে উঠে প্রথম চা বাগান। এ দম্পতিই জেলায় চা চাষের প্রথম উদ্যোক্তা।

২০০৭ সালে তার গড়ে তোলা চা বাগান থেকে প্রথম সবুজ চা পাতা থেকে হামান দিস্তা ( উড়–ন গাইন) মাধ্যমে চা উৎপাদন শুরু হয়।এরপর ২০০৮ সালে তা ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয় ।

সোমা চা বাগানের সফলতা দেখে এ জেলার কৃষকরা চা চাষে আগ্রহী হয়। জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রায় ২শ’ একর জমিতে গড়ে উঠেছে চা বাগান।

এসব বাগানে প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন চা পাতা উৎপন্ন হচ্ছে।চা শিল্প পুরোপুরি বিকাশ ঘটলে দেশের অর্থনীতিতে যতেষ্ট প্রভাব ফেলবে এ জেলার চা চাষে।

একই সঙ্গে জেলাবাসীর আর্থ সামাজিক অবস্থার ও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।

সোমা টি প্রসেসিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেরদৌস আলম বলেন, চা প্রক্রিয়াজাত করনের জন্য বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও স্থানীয় চা বাগান মালিকের যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠেছে সোমা এ্যান্ড সোমা টি প্রসেসিং লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

চুক্তি অনুযায়ী কারখানা ব্যয়ের ৪৯ শতাংশ বহন করবে শিল্প ব্যাংক আর ৫১ শতাংশ বহন করবে মালিক পক্ষ।

সে অনুযায়ী ২ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা ঋন দেয়ার আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ঋন দেয় শিল্প ব্যাংক। এ অর্থ দিয়ে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলার পূর্ব বিছনদই গ্রামে গড়ে উঠে চা শিল্প। শুরুতে এ কারখানায় সবুজ পাতা দিয়ে উৎপাদিত চা চট্রগ্রাম নিলাম বাজারে পাঠানো হয়। এ চা সেখানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

কিন্তু লো ভোল্টেজের কারনে ওই বছরের নভেম্বরে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। চা কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানকার চা চাষীরা পড়ছে বেকায়দায়

।তাদেরকে এখানকার উৎপাদিত চায়ের সবুজ পাতা পঞ্চগড়ে নিয়ে চা উৎপাদন করতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় চা চাষীরা হিমশিম খাচ্ছে। তাদেরকে গুনতে হচ্ছে লোকসান। অপরদিকে জেলায় চা বাগানের উদ্যোক্তা দম্পতি ফেরদৌস সোমার ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।এ চা কারখানা চালু না হলে এ দম্পতি সর্বশান্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। চা বাগানের শ্রমিক জেসমিন নাহার (২৮) বলেন, চা বাগানের শুরু থেকেই আমি শ্রমিকের কাজ করে আসছি।

চা পাতা তোলার দিন মজুরি হিসেবে দৈনিক ২শ’ করে টাকা পাই। এছাড়া এ বছর সরকারিভাবে ৫ হাজার টাকা পেয়েছি। গত বছরও ৫ হাজার টাকাা পেয়েছিলাম।অপর চা শ্রমিক রাশেদুজ্জামান, বিজলী, মোমেনা ও হাছিনা একই ভাবে তাদের অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, এ চা বাগানে কাজ করে আমাদের জীবীকা নির্ভর করি এবং পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে দু:খে সংসার চালাচ্ছি।

এ অঞ্চলের চা বাগানের স্বপ্নদ্রষ্টা শাহানা বেগম সোমা বলেন, সিলেট ও পঞ্চগড়ে চা বাগান দেখে আগ্রহী হয়ে উপজেলা পূর্ব বিছনদই গ্রামে গড়ে তুলেছি চা বাগান। এ চা বাগান দেখে অনেকে চা চাষে আগ্রহী হয়।

প্রয়োজনের তাগিতে কম খরচে চা উৎপাদন করতে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক ভাবে গড়ে তোলা হয় সোমা টি প্রসেসিং কারখানা।

এ কারখানা গড়তে চুক্তির অর্থ জোগাড় করতে জমি বিক্রয় ও বিভিন্ন স্থানে ঋন নিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ফেলি। কিন্তু বিদ্যুতের লো ভোল্টেজের কারনে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়।

ফলে সবদিক দিয়ে মহা চিন্তায় পড়ে হিমশিদ খাচ্ছি। বিদ্যুতের লো ভোল্টেজ নিরসন করে কারখানা চালুর ব্যবস্থা সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবী জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের লালমনিরহাট জেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আরিফ খাঁন বলেন, এ এলাকার জমি চা চাষের উপযোগী। তাদের আগ্রহ দেখে উপজেলার শিংগীমারী গ্রামে বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন চা নার্সারী গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু পূর্ব বিছন গ্রামের লো ভোল্টেজের কারনে সোমা টি প্রসেসিং কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদিত ব্যয় বেড়ে গেছে।

বিদ্যুতের লো ভোল্টেজ নিরসন করে পুনরায় কারখানাটি চালু হওয়া প্রয়োজন। তা হলে স্থানীয় চা চাষীদের উৎপাদন খরচ কমবে, আয় বাড়বে তাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *