হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে খাল পুনঃখননে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি পুরনো খালের জমি বাদ রেখে সাধারণ কৃষকদের ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলি জমিতে খাল পুনঃখনন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর ফলে পুনঃখননে করা খালের মাটি দিয়ে পাশের ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষিজমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে সাধারণ কৃষকরা তাদের একমাত্র অবলম্বন কৃষি জমি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ভুক্তভোগী কৃষকদের দাবি, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কৃষকের মালিকানা জমির ওপর দিয়ে খাল পুনঃখনন হচ্ছে। সেই সঙ্গে পুরনো খালের দু-পাশে এক হাজারেরও বেশি গাছ অবৈধভাবে কেটে নিয়ে গেছে ঠিকাদারের লোকজন। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী কৃষকরা আদালতের আশ্রয় নিয়ে ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধের ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রীখাতা মৌজার এক একর ৯০ শতাংশ জমি পৈত্রিক ও কবলা সূত্রে মালিকানা হিসেবে দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে ভোগদখল করছেন উপজেলার গেগরা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলী খন্দকারের নাতি শফিকুল ইসলাম খন্দকার, আসাদুজ্জামান খন্দকার ও আনোয়ারুল ইসলাম খন্দকার। ব্যক্তি মালিকানা হিসেবে ওই জমি ভূমি উন্নয়ন করও পরিশোধ করেন তারা। জমিটির উত্তর পাশে ভেটেশ্বর খাল প্রবাহিত। আর এ জমির ফসলই তাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র সম্বল। কিন্তু সম্প্রতি খাল খননের উদ্দেশ্যে পুরনো খালের জমি বাদ রেখে মালিকানাধীন জমিতে লাল নিশানা সাটান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), ইউএনও এবং জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে কয়েক দফায় অভিযোগ করে তদন্তের দাবি জানলেও কোনো প্রতিকার পাননি কৃষকরা। অপরদিকে এলাকার প্রভাবশালীরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তদন্তের অজুহাতে দীর্ঘ সময় ক্ষেপণ করছে আর প্রশাসন খাল পুনঃখনন চালিয়ে যাচ্ছে ।
ভুক্তভোগী কৃষকের অভিযোগ কোনো নোটিশ ছাড়াই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা মূল খালের উত্তরে থাকা প্রভাবশালী ভূমি মালিকদের মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করে খালটি খাস জমি থেকে দক্ষিণে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে সরিয়ে নেয়। ফলে প্রভাবশালীরা খাস জমির মালিক বনে যান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এক কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি পুনঃখনন কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাজুল ইসলাম। প্রথম দিক থেকে খাল পুনঃখননে সাধারণ কৃষকের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখলের অভিযোগ তোলেন। এতে বাঁধা দিতে গেলে প্রভাবশালীদের সহায়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সরকারি কাজে বাঁধা দান মামলার হুমকি দিয়ে ৩শ মেহগনি গাছ ও বাঁশ ঝাড় কেটে নেয়। পরে ফসলি জমির ওপর ওপর দিয়ে ভেকু মেশিনে খাল খনন করে পূর্বে খাল ভরাট করে প্রভাবশালীদের দখলে দেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শফিকুল ইসলাম খন্দকার বলেন, রেকর্ড, দলিল, নামজারি ও খাজনা সব আমাদের নামে। অথচ পাশে খাস জমি রেখে পুরাতন খাল ভরাট করে আমাদের ফসলি জমিতে খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে প্রভাবশালীরা খালটি সরিয়ে দিয়ে খাস জমি নিজেদের দখলে নিয়েছে। বিষয়টি উচ্চ মহলের তদন্ত দাবি করেন তিনি।
খাল পুনঃখনন কাজের তদারকি কর্মকর্তা লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডে উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিটন আলী বলেন, খালের পানি রক্ষায় যেটাতে সহজতর হবে। সেদিকে খালটি খনন করা হয়েছে। তবে কারো ব্যক্তিগত জমিতে নয়, খনন হয়েছে ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত খাস জমিতে। তবে সেই জমির ভূমি কর কেন ভূমি অফিস গ্রহণ করেছে সেটা ভূমি অফিসের বিষয়।
কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু সাঈদ বলেন, কৃষকদের অভিযোগটি সার্ভেয়ারকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। সার্ভেয়ার একাই দুই স্টেশনে দায়িত্ব পালন করায় তদন্ত করতে পারেননি। তবে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।