গাজীপুর: আবেদনের প্রক্রিয়া যথাযথ না হওয়ার কারণ দেখিয়ে গাজীপুরে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) খালেদা জিয়ার জনসভার অনুমতি দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি বলে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক। অপরদিকে একই স্থানে ছাত্রলীগও সমাবেশ আহ্বান করলেও তারাও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি গ্রহণ করেনি বলে জানা গেছে প্রশাসন সূত্রে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জনসভাস্থল গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কর্তৃপক্ষ বিএনপির আবেদনের উপর লিখেছে, অনুমোদিত। ওই অনুমতিপত্রের অনুলিপি স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে দেওয়া হয়েছে।
সরকারি গোয়েন্দা সূত্র বলছে, জনসভার মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষ যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেনি। বিএনপির আবেদনের উপর কলেজ কর্তৃপক্ষের লেখা প্রয়োজন ছিল, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
কলেজ কর্তৃপক্ষের এই প্রাথমিক মতামতের ভিত্তিতে পুলিশ সুপার আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি মাথায় রেখে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি প্রতিবেদন দেবেন। পুলিশের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মতামতের ভিতিতে জেলা প্রশাসক চূড়ান্ত অনুমতি দেবেন অথবা নাও দিতে পারেন। কিন্তু গাজীপুরে খালেদা জিয়ার জনসভার অনুমতির ক্ষেত্রে ওই নিয়ম পালন করা হয়নি।
সূত্র আরও জানায়, জেলা প্রশাসকের অনুমতি প্রদান বা অনুমতি না দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আবেদনকারীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর পূর্ব পর্যন্ত সরকারি দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা জনসভার অনুমতির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারেন না। ওই ক্ষেত্রে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ ও গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. হারুনর রশীদ অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করেছেন, যা বিধিসম্মত নয়।
ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকের তোয়াক্কা না করে সরাসরি অনুমতি দিয়ে ভুল করেছে। আর পুলিশ সুপার জনসভা করতে দেওয়া যাবে না বলে আগাম মন্তব্য করে পরিস্থিতি আরো ঘোলা করেছেন।
এদিকে যথাযথ অনুমতি গ্রহণের প্রক্রিয়া ছাড়াই ওই স্থানে পাল্টা সমাবেশ আহ্বান করেছে স্থানীয় ছাত্রলীগও।
এ বিষয়ে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু হায়দার আহমেদ নাসের বাংলানিউজকে জানান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়ের অনুমতি নিয়েই বিএনপির জনসভার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসককেও।
এ প্রসঙ্গে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. হারুনর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, যথাযথ অনুমতি নিয়ে যে কেউ সভা সমাবেশ করতে পারবেন।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মো. নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপিকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। অনুমতি পেলে সমাবেশ করতে পারবে দলটি।
২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষ্যে গাজীপুর জেলা বিএনপি এক জনসভা আহ্বান করে। কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তারা জনসভার কাজও শুরু করে। পরে ২১ ডিসেম্বর গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগ একই তারিখ ও সময়ে একই স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করে। একই সময়ে দুই দলের সমাবেশ কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গাজীপুর। এখন নিজ নিজ দলের পক্ষে সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই পক্ষই।