কলকাতা: দীর্ঘ ৩০ ঘন্টা লুকোচুরির পর বুধবার রাতে ভারতের সাবেক অর্থ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদা¤রমকে হেফাজতে নিয়েছে সিবিআই। এরপর তাঁকে সিবিআইয়ের সদর দপ্তরে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সিবিআই সুত্রের খবর, দিন ভর নাটকের শেষে বুধবার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে পি চিদাম্বরমকে। এ দিন রাতে চিদাম্বরম প্রকাশ্যে আসার পরে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন সিবিআই ও ইডি অফিসাররা। দরজা না খোলায় দেওয়াল টপকে বাড়িতে ঢুকে তাঁরা রাত পৌনে দশটা নাগাদ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্ট চিদাম্বরমের আগাম জামিন বাতিল কওে দেওযার পর থেকে তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। একটি দুর্ণীতি মামলায় সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা হন্যে হয়ে তাঁকে খুঁজছিলেন। তবে বুধবার সারাদিন ধরে সুপ্রিম কোর্টে চিদাম্বরমের গ্রেপ্তারি ঠেকাতে জামিন আবেদনের শুনানী হয় নি। সন্ধ্যার পরে জানা গেছে, আগামী শুক্রবার তার জামিন আবেদনের শুনানী হতে পারে। ফলে চিদাম্বরমের গ্রেপ্তারিতে কোনও বাধা নেই বলে আইনজ্ঞরা মনে করেছেন।
এ দিন সকালেই চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ফলে দেশের বাইরে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বুধবার সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করে চিদাম্বরমের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ‘বেপাত্তা’ বলে তদন্তকারী সংস্থা দু’টি যে দাবি করছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি পালিয়ে যাননি এবং বিচার প্রক্রিয়াকেও এড়াচ্ছেন না। তবে আদালতকে সিবিআই পাল্টা জানায়, যে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে উঠেছে তা নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। অন্য দিকে, ইডি আদালতে একটি ক্যাভিয়েট দাখিল করে। ফলে এই তদন্তকারী সংস্থার বক্তব্য না শুনে কোনও রায় দিতে পারবে না আদালত। মঙ্গলবারই আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় দিল্লি হাইকোটের্র বিচারপতি সুনীল গৌর রায়ে বলেছেন, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমই আইএনএক্স মিডিয়া আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলার ‘কিংপিন’ অর্থাৎ প্রধান ষড়যন্ত্রী। আইএনএক্স মিডিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগে অসঙ্গতির অভিযোগে চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে ইডি এবং সিবিআই।
অভিযোগ, ইউপিএ সরকারের আমলে অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে চিদাম্বরম পিটার ও ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের আইএনএক্স মিডিয়া গোষ্ঠীকে বেআইনি ভাবে বিদেশি লগ্নি আনার ছাড়পত্র দিয়েছিলেন। তার বিনিময়ে পিটার-ইন্দ্রাণী তাঁকে সোজা ও ঘুরপথে ঘুষ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এর আগে চিদম্বরমের পুত্র কার্তিকে এই আইএনএক্স মিডিয়া মামলাতেই সিবিআই গ্রেপ্তার করেছিল। প্রায় তিন সপ্তাহ সিবিআই হেফাজতে ছিলেন কার্তি। তবে এদিন চিদাম্বরমকে হেফাজতে নেবার পর কার্তি চিদাম্বরম বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সব করা হচ্ছে। এই মামলায় চিদাম্বরমকে যেভাবে জড়ানো হয়েছে তার নিন্দা করে কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেছেন, ইডি, সিবিআই এবং মেরুদন্ডহীন সংবাদ মাধ্যমের একাংশকে কাজে লাগিয়ে চিদাম্বরমের চরিত্রহননের চেষ্টা করেছে মোদী সরকার। ক্ষমতার এই নির্লজ্জ অপব্যবহারের তীব্র নিন্দা করেছেন রাহুল। চিদাম্বরম ইস্যুতে সরব হয়েছেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধীও। কংগ্রেস চিদাম্বরমের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছে, অর্থনীতির দুর্দশা থেকে অনুচ্ছেদ ৩৭০ রদ করার মতো বিষয়ে চিদাম্বরম গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী স্বর ও মস্তিষ্ক হিসেবে কাজ করতেন। রাজ্যসভাতে সরকারকে আক্রমণে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কংগ্রেসের অভিযোগ, এই কারণেই চিদাম্বরমকে নিশানা করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন, দুর্নীতির সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলকে জড়ানো উচিত নয়। দুর্নীতির তদন্তে আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত সকলের।