হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর উত্তরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুল সময়টা কাটছে জীবন আর প্রাণ হানির আশঙ্কায়। দুঃচিন্তায় রয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবক মহলও।
২১ আগস্ট সকালে সরেজমিন ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ২০০৯ সালে ৩৩ শতাংশ জমির ৮ শতাংশের উপর নির্মিত একটি অনুপযোগী জড়োসড়ো(অনেকটা) টিনের ঘরে চলছে স্কুল কার্যক্রম। বারান্দা বাদে বাকী প্রায় ২৫ শতাংশ জায়গা জুড়েই শুধু খাল আর পুকুর যার পুরোটাই পানি বেস্টিত। ফলে খেলাধুলা ও ঘোরাফেরার সুযোগ না থাকায় বিদ্যালয়ে এসেও শ্রেণীকক্ষের বন্দী জীবন কাটাতে হচ্ছে কোমলমতিদের।
অপরদিকে শ্রেণীর বাইরে বের হতে পারলেও পানিতে পড়ে কে কখন প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনার শিকার হবে সে আশঙ্কায় দিন কাটছে সংশ্লিস্টদের। ফলে ক্রমেই বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কেউ কেউ।
এছাড়াও খাল লাগোয়া বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার সহজ পথটিও হাঁটুর উপর পানিতে নিমজ্জিত থাকায় সেখান দিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে কাপড় চোপড় ভেজার পাশাপাশি পানিতে পড়ে বই পুস্তকও নস্ট হয় কারও কারও।
আবার সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন সমস্যাও রয়েছে প্রকট। খালের নোংরা ও দূষিত পানির সাথেই স্থাপিত নলকূপটি রয়েছে কাঁচা এবং ল্যাট্রিনটি রয়েছে প্রায় অর্ধ ডুবন্ত অবস্থায় যা অনেকটাই হয়ে পড়েছে ব্যবহার অনুপযোগী।
বিদ্যালয়টির চারদিক পানি বেস্টিত হওয়ায় শ্রেণীকক্ষের যত্রতত্র পিঁপড়ের বাসা বাঁধা ও পোকা মাকড়ের আনাগোনায় পাঠে মনোযোগী হয়ে উঠতে পারছেনা ছাত্র ছাত্রীরা।বৃষ্টির দিনগুলোতে ব্যাহত হয়ে পড়ে পাঠদান। নেই বিদ্যুত ব্যবস্থা ও সোলার প্যানেলও।
বিদ্যালয়টিতে শহীদ মিনার থাকলেও সামনে পানি ভর্তি খালের কারনে সেটিকে পেছনে রেখেই চালাতে হয় দৈনিক সমাবেশ কার্যক্রম বলে জানান বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক কে এম জাকারিয়া।
এমন বিষয়গুলোতে অসন্তোষ প্রকাশ করছে এলাকার সচেতন ও ভুক্তভোগী মহলও। প্রধান শিক্ষক বলেন ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারিতে জাতীয়করন হওয়া এ বিদ্যালয়ে ভবন নির্মানে সরকারী বরাদ্দ পাওয়া গেছে এবং চলতি জুনে সেটার কাজ শুরু করার কথা ছিল বলে জেনেছি আর সে কাজ শুরু হলে বর্তমান ঘরটি স্থানান্তর করা জরুরি কিন্তু বিদ্যমান খাল ও পুকুর ভরাট করা না গেলে তা স্থানান্তর সম্ভবপর হচ্ছেনা বলেও মনে করেন তিনি সেই সাথে এ স্কুল ঘরটি যে কোনো সময় ভেঙ্গে পড়ে ক্ষয় ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষনও করেন তিনি।
সহকারী শিক্ষক রুনা সুলতানা ও শাকিলা আক্তার বলেন, বিদ্যালয়টির এমন অবস্থায় দুর্গন্ধে সেখানে থাকা যায়না, অভিভাবকরাও ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চাননা এবং বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার নিয়ে আসলেও খেতে মন চায়না।
শিক্ষকরা বলেন চলতি পাটের মৌসুমে এখানে পাট জাগ দেয়ায় পচা পানিতে ডেঙ্গু মশার কারখানা তৈরী হয়েছে মনে করে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গেছে। সব মিলে আদর্শ ও আধুনিক বিদ্যালয় ব্যাপারটা তাদের কাছে যেনো স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিন আহমেদ এর সাথে কথা হলে তিনি মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে বিদ্যালয়ে মাটি ভরাটে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহনের কথা জানান।
এমতাবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে বিদ্যালয়ে মাটি ভরাট ও নতুন বিল্ডীং নির্মান পূর্বক সরকারের আধুনিক ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরন কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নে সংশ্লিস্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার দাবী জানিয়েছে ভুক্তভোগী সহ এলাকাবাসী।