চট্টগ্রাম: খেলাপি ঋণের ১৫ মামলা মাথার ওপরে। ৯ মামলায় সাজাও হয়েছে। কিন্তু সেদিকে খেয়ালই ছিল না তার। আর বেখেয়ালে হঠাৎ কানাডা থেকে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে হাতকড়া পড়লো চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাগদাদ গ্রুপের কর্ণধার ফেরদৌস খান আলমগীরের স্ত্রী মেহেরুন নেছার (৫০)। সোমবার রাতে তাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান বাগদাদ গ্রুপের পরিচালক এবং শাফিয়াল ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তিনি। তার স্বামী চট্টগ্রামের রাউজানের বাসিন্দা বাগদাদ গ্রুপের কর্ণধার ফেরদৌস খান আলমগীরের কাছেও বিভিন্ন ব্যাংকের অন্তত ৩০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
জানা গেছে, সোমবার রাত ৩টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে মেহেরুন নেছাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে চট্টগ্রামের খুলশী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
তাকে চট্টগ্রামে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রণব চৌধুরী। তিনি জানান, মেহেরুন নেছা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জহিরুল আলম দোভাষের বড় ভাই নবী দোভাষের মেয়ে।
চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারে তার পৈত্রিক বাড়ি হলেও দেশে এলে তিনি খুলশী জাকির হোসেন সড়কের পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার বাড়িতেই থাকেন। তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতের ১১টি মামলায় পরোয়ানা জারি রয়েছে। ওইসব পরোয়ানামূলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ওসি বলেন, বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের চেক প্রতারণার ৯ মামলায় ইতিমধ্যে মেহেরুন নেছার সাজা হয়েছে। এছাড়া একই প্রতিষ্ঠানের আরও ছয় মামলায় তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা রয়েছে।
মামলাগুলোর মধ্যে চেক প্রতারণার মামলা ১৩টি এবং অর্থঋণ মামলা দু’টি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় বসবাস করার কারণে তার নাগাল মিলছিলো না।
সোমবার রাতে কানাডা থেকে তিনি একটি ফ্লাইটে করে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার খবর পেয়ে খুলশী থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশকে অবহিত করা হয়। এ সূত্র ধরেই বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে মেহেরুন নেছাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা গেছে, শাফিয়াল ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মেহেরুন নেছা ২০১০ সালে ফিনিক্স ফাইন্যান্স আগ্রাবাদ শাখা থেকে দুই কোটি ৫২ লাখ টাকা ঋণ নেন। এই ঋণ অল্পদিনের মাথায় খেলাপি হয়ে পড়ে। ফিনিক্স ফাইন্যান্স থেকে নেয়া ওই ঋণ বর্তমানে সুদাসলে দাঁড়ায় পাঁচ কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার ৬৭৫ টাকা। ফিনিক্স ফাইন্যান্স ওই টাকার বিপরীতে মেহেরুন নেছার বিরুদ্ধে আদালতে ৯টি মামলা করেন। একপর্যায়ে মেহেরুন নেছা কানাডায় পাড়ি জমান।
৩০০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে বাগদাদ গ্রুপের কর্ণধার ফেরদৌস খান আলমগীরের প্রায় পুরো পরিবারই কানাডা প্রবাসী দীর্ঘদিন ধরে। তার ভাই আরেক ঋণখেলাপি তানভীর খান আলমগীরও পাকাপাকিভাবে কানাডায় বসবাস করছেন।
এদিকে বাগদাদ গ্রুপের চেয়ারম্যানের স্ত্রী হলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মেহেরুন নেছার কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তানভীর খান। তিনি বলেন, তিনি (মেহেরুন নেছা) আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানের কোনো পদে নেই। আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্যও তিনি কোনো ঋণ নেননি। ব্যক্তিগত কাজে তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। আমি যতদূর জানি, ফ্ল্যাট কেনার জন্য তিনি দেড় কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নেই।