শুভ বড়দিন

সম্পাদকীয়

imagesশুভ বড়দিন আজ। এই দিনে খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক মহামানব যিশু জেরুজালেমের কাছে বেথলেহেমের এক গোয়ালঘরে জন্ম নিয়েছিলেন। বিশ্বের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা আজ উৎসবমুখর পরিবেশে পবিত্র এই দিনটি পালন করবে। এ দিনের কর্মসূচি শুধু আনন্দ-উৎসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, যিশুর শান্তির বাণীও ছড়িয়ে দেওয়া হবে মানুষের মধ্যে। হিংসা-বিদ্বেষ, অন্যায়-অত্যাচার ও পাপাচারে নিমজ্জিত মানুষকে সুপথে আনার জন্যই যিশু আবির্ভূত হয়েছিলেন। যিশুর জন্মদিন তাই শুধু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য নয়, সারা মানবজাতির জীবনেই উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

পথভ্রষ্ট ব্যক্তিদের আলোকিত পথ দেখিয়ে যিশুখ্রিস্ট সারা জীবন আর্তমানবতার সেবা, ত্যাগ ও শান্তির আদর্শ প্রচার করেছেন। একটি মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে তিনি হিংসা ও বিদ্বেষ ভুলে সবাইকে শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। খ্রিস্টীয় মতে, যিশু ঈশ্বরের পুত্র; জগতের সব মানুষের ত্রাণকর্তা। তিনি বঞ্চিত-লাঞ্ছিত মানুষকে দিয়েছেন বঁাঁচার অনুপ্রেরণা। মানবজাতিকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে তিনি ফেরাতে চেয়েছিলেন মমতা, ভালোবাসা ও ক্ষমাশীলতার পথে। মানবসেবার অন্যতম আদর্শ তিনি। শাসকের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি শোষিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষ নিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি ওই সময়ের শাসকের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে জীবন দিতে হয়েছিল।

যিশুর পথ ছিল সংযম, সহিষ্ণুতা ও ভালোবাসার। মানুষের নৈতিক দৈন্যের কারণে সারা বিশ্বে আজ হিংসা, হানাহানি ও অশান্তি বেড়েই চলেছে। বড়দিনের বাণী এই দৈন্য ও সংকীর্ণতার উর্ধ্বে ওঠার জন্য। পৃথিবীজুড়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি ও হিংসা-বিদ্বেষের এই যুগে যিশুর শিক্ষা অনুসরণীয়। প্রতিটি ধর্মেরই মূল বাণী হলো মানবতাবোধ। বড়দিন উপলক্ষে যে প্রেম ও আশার বাণী প্রচার করা হয়, তারও মূলে রয়েছে মানবতা। ধর্মকে কেন্দ্র করেই এই একবিংশ শতকেও কিছু মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত পরিলক্ষিত হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এবারের বড়দিন প্রত্যেক মানুষকে শান্তি, প্রেম ও সম্প্রীতির শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করুক। পৃথিবী থেকে দূর হোক হিংসা ও সাম্প্রদায়িকতা। বিদায় নিক বর্ণবাদের মতো নিকৃষ্ট সব চিন্তাধারা।

পৃথিবীর অন্য সব দেশের খ্রিস্টানদের মতো এবার বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে ও যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে উদ্‌যাপন করবে। বাংলাদেশে বড়দিনের উৎসব কেবল শহরেই অনুষ্ঠিত হয় না। শহরের বাইরে খ্রিস্টান অধ্যুষিত কিছু গ্রামগঞ্জেও খুবই আবেগ ও আনন্দময় পরিবেশে উদ্‌যাপিত হয়। এ উৎসব সবার জন্য আনন্দময় হয়ে উঠুক। পৃথিবীজুড়ে ভালোবাসার বিস্তার ঘটুক। পবিত্র এ উৎসবের দিনে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ফিরে আসুক শান্তি ও সম্প্রীতি। শুভ বড়দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *