নীলফামারী: নীলফামারীর জলঢাকায় শোক দিবসের কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ সাতজন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে জলঢাকা উপজেলা শহরের বঙ্গবন্ধু চত্বর এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ ১৩ রাউন্ড টিয়ার শেল ও ১৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহতরা হলেন, জলঢাকা থানার উপ-পরিদর্শক মামুন-অর রশীদ, কনস্টেবল মেহেদি হাসান, নাসির, রুবেল, সাইফুল, শিক্ষক শাহিনুর রহমান ও পথচারী দুলাল হোসেন। তাদেরকে জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় উপ-পরিদর্শক মামুন-অর রশীদকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
সূত্র মতে, শোক দিবস উপলক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সহীদ হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে উপজেলা শহরের জিরো পয়েন্টে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ হোসেন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু চত্বর এলাকায় পৃথক কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। বৃহস্পতিবার ওই কর্মসূচি পালনকালে দুই গ্রুপের মধ্যে দুই দফায় সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট এবং টিয়ার শেল ছুড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে শহরের বঙ্গবন্ধু চত্বর এলাকায় মান্নান-আশরাফ সমর্থিত নেতাকর্মীরা শোক দিবসের আলোচনায় অংশ নেয়। এসময় মিন্টু ও রুবেলের নেতৃত্বে একটি শোক র্যালি বের হলে বঙ্গবন্ধু চত্বর দিয়ে যাবার সময় অতর্কিতভাবে ওই আলোচনা সভায় হামলা করে। এতে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরে দুপুর একটার দিকে মিন্টু-রুবেল সমর্থকরা শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় আলোচনা অনুষ্ঠান শেষ করে বঙ্গবন্ধু চত্বর এলাকায় পৃথক সভাস্থলে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় জলঢাকা থানার উপ-পরিদর্শক মামুন-অর রশীদসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়। এসময় পুলিশ ১৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ১৩ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন বলেন, জলঢাকা উপজেলা শহরের শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১৩ রাউন্ড টিয়ার সেল ও ১৫ রাউন্ড রাবার ব্যুলেট নিক্ষেপ করা হয়।
এসময় পুলিশের একজন উপ পরিদর্শকসহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়। আহতদের মধ্যে উপ পরিদর্শক মামুন-আর রশীদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। অপর ৪ পুলিশ সদস্যকে জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
অভিযোগ পাল্টাপাল্টি
শোক দিবসের কর্মসূচিতে সংঘর্ষের ঘটনায় বিবাদমান ওই দুই গ্রুপের মধ্যে অভিযোগ পাল্টাপাল্টি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলি মিন্টু গ্রুপের নেতাকর্মীদের অভিযোগ সাবেক এমপি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সমর্থিত মান্নান-আশরাফ গ্রুপের নেতাকর্মী তাদের কর্মসূচি চলাকালে হামলা হালায়। তাদের দাবি কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিটর ব্যারিস্টার তুরীন আফরোজকে হত্যার উদ্দেশ্যে জামায়াত শিবিরকে সাথে নিয়ে ওই হামলা চালায়।
অপরদিকে মান্নান-আশরাফ গ্রুপের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টুর নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে কর্মসূচি পণ্ড করে দেয়। তারা লাটিসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র হাতে নিয়ে ওই হামলা চালায়। ওই হামলা পূর্ব পরিকল্পিত। সামনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে লক্ষ্য করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি করার উদ্দেশ্যে ওই হামলা চালায়।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষক লীগের সদস্য জলঢাকা পৌরসভার সাবেক মেয়র ইলিয়াছ হোসেন বাবলু বলেন, ‘সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফাসহ আমি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত কর্মসূচির অতিথি ছিলাম। বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আমাদের শোকসভা চলছিল। সেখানে সর্বস্থরের মানুষ উস্থিত ছিলেন। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টুর নেতৃত্বে লাটিসহ ধারালো বিভিন্ন অস্ত্র হাতে আমাদের ওপর হামলা চালায়।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান ওই হামলার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টুকে দায়ী করে বলেন, ‘তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ওই হামলা চালায়। তাদের হামলায় অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’
এ বিষয়ে কথা বললে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী বলেন, ‘পূর্ব ঘোষিত কর্মসুচির অংশ হিসেবে আমরা দলীয় কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলন করে ডালিয়া সড়কে একটি শোক র্যালি বের করি। র্যালিটি বঙ্গবন্ধু চত্বরে আসা মাত্র সাবেক সাংসদ গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে চার থেকে পাঁচ শত জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মী আমাদের শোক র্যালিতে হামলা চালায়। এতে আমিসহ ২০ থেকে ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছি।’
আপনাদের কর্মসূচিতে অংশ নেয়া মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজসহ অনেকের হাতে লাঠি দেখা গিয়েছিল কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তারা অত্মরক্ষার জন্য লাঠি হাতে নিয়েছিল।’ জামায়াত শিবিরের কোন কোন নেতাকর্মী ছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাদের নাম ও পদ পদবি আমি জানি না।
এ বিষয়ে কথা বললে, অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করে সাবেক সাংসদ গোলাম মোস্তফা বলেন, তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে লাঠি সোঠা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের সভায় হামলা করেছেন। যা জলঢাকার হাজার হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন।