ঠাকুরগাঁও: বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা চিন্তা করে অবিলম্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ উদ্যাপন শেষে আজ বুধবার সকালে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে শহরের কালীবাড়ি এলাকায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, কোরবানি করা পশুর প্রচুর চামড়া লেদার ইন্ডাস্ট্রিজে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে এবার চামড়া ব্যবসায়ীরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দাম না পেয়ে বহু জায়গায় চামড়া মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, তাঁদের সময় চামড়া কেনার জন্য ব্যবসায়ীদের ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হতো। যাঁরা লেদার ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের কাছে চামড়া পৌঁছে দেওয়া হতো। কিন্তু চামড়াশিল্প নিয়ে কোনো ধরনের উদ্যোগ না থাকায় বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এখন শেষ মুহূর্তে বলা হচ্ছে, কাঁচা চামড়া রপ্তানি করা হবে। এই সিদ্ধান্তও হয়েছে অনেক দেরিতে। সরকারের সমস্যা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। কোথায় জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হলো, কোন ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হলো, এটা নিয়ে সরকারের কখনো মাথাব্যথা ছিল না। এখনো নেই। সে কারণে তাদের সিদ্ধান্ত গণবিরোধী হয়। এতে আল্টিমেটলি দেশেরই ক্ষতি হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, যে কথাটা আওয়ামী লীগ সরকার বারবার বলার চেষ্টা করে, তা হলো তারা দেশের উন্নয়ন করছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে গেছে। এখন প্রমাণিত হয়ে গেছে, এটা জনগণকে ভুল বোঝানোর একটা কৌশল। অনেক অর্থনীতিবিদ প্রমাণ করেছেন, সরকারের দাবি ঠিক নয়। সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, বাংলাদেশে ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে না। সরকারি খরচ বাড়ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ব্যাংকে যারা টাকা জমা রাখছে, ফিক্সড ডিপোজিটেও ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে গোটা দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়েছে। ব্যাংক সেক্টর দুর্নীতিতে ভরপুর। ব্যাংকিং সেক্টর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যাংকে মানুষ টাকা তুলতে গেলে টাকা পায় না। ব্যাংকগুলো টাকা দিতে পারে না। ব্যাংকগুলো চলছে সম্পূর্ণভাবে অনিয়মের মধ্য দিয়ে। ব্যাংকিং সেক্টরে যে অনিয়ম, তা পুরো অর্থনীতিতে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিএনপির মহাসচিবের ভাষ্য, আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় বড় মানুষ উপদেষ্টা-মন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। তাঁরাই ব্যাংকগুলো থেকে টাকা নিয়ে আর পরিশোধ করেন না। গুটি কয়েক মানুষের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসাজশে এই কাজগুলো করা হচ্ছে। অর্থাৎ এটাই হচ্ছে শোষণের একটা বড় রাস্তা। সে কারণে তাঁরা বারবার বলে আসছেন, এ সরকারের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি, এ সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। নতুন নির্বাচন দেওয়া উচিত। আর সে নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। কারণ, আমরা সবাই দেখেছি নির্বাচন কী হয়েছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের যে ভয়াবহ অবস্থা হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের একটাই পথ। গণতন্ত্রের প্রতীক খালেদা জিয়া বাইরে না এলে এসব সমস্যার সমাধান হবে না। খালেদা জিয়াকে দিয়েই এসব সমস্যার সমাধান হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি একমাত্র রাস্তা।
আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উল আলম হানিফের একটি বক্তব্যের প্রসঙ্গ ধরে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, বিচার বিভাগ সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সেখানে খালেদা জিয়া কতটুকু আইনি সুবিধা পাবেন। খালেদা জিয়া এমন কিছু করেনি যে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। জনগণের একটা সময় আসবে। দেশে যখন দুঃশাসন চলতে থাকে, তখন জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন ঘটে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবু তাহের, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তারিক আদনান প্রমুখ।