ঢাকা: কারাগারে ৬ষ্ঠ বারের মতো ঈদ কাটবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। তিনি কারা তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের কেবিন ব্লকের ষষ্ঠ তলায় কাটছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দিন। গত ৬ই আগস্ট হাসপাতালে বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পরিবারের সদস্যরা। সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান, মেয়ে জাহিয়া রহমান, খালেদা জিয়ার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ও তার ছেলে অভিক ইস্কান্দারসহ ৬জন। এখন পর্যন্ত খালেদার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা হয়েছে। ৩৫টি মামলায় জামিনে আছেন তিনি। এর আগে তার চারটি ঈদ কেটেছে পুরান ঢাকার সাব জেলে।
গত ঈদুল ফিতরও কেটেছে কারাবন্দি অবস্থায় হাসপাতালে। এর আগে ১/১১ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দু’টি ঈদ কারাগারে কাটাতে হয়েছে বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াকে। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ঘোষিত সাবজেলে ওই দুই ঈদে খালেদা জিয়ার পাশের আরেকটি সাবজেলে ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
বিএনপির মিডিয়া উইং এর সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, এবার ঈদের দিন দলের সিনিয়র নেতারা নামাজের পর প্রথমে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রয়াত জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। সেখান থেকে বনানীতে খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করবেন। সেদিন পরিবারের সদস্যদের খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বিএসএমএমইউ যাওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে কারা কতৃপক্ষের কাছে আবেদনও করা হয়েছে।
বিএনপির আইনজীবীরা জানান, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দায়ের ৩৭টি মামলার মধ্যে ৩৫ মামলায় জামিনে আছেন তিনি। গত ১৮ই জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কটূক্তি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের দুই মামলায় হাইকোর্ট তাকে ৬ মাসের জামিন দেন। তখন বিএনপির আইনজীবীরা মনে করেছিলেন খুব শিগগিরই জামিন পাবেন তিনি। কিন্তু গত ৩১ শে জুলাই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন আবেদনের শুনানি হয়। শুনানিতে জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, এই মামলায় খালেদা জিয়া ১৬ মাস ধরে জেল খাটছেন। এর আগে আপনারা ৫,৭ ও ১০ বছরের মেয়াদের সাজা মামলায় জামিন দিয়েছেন। সেখানে কেউ এত দিন জেল খাটেনি। তিনি একজন বয়স্ক মহিলা। তার বয়স এখন ৭৫ বছর। দীর্ঘ দিন জেলে থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু হাইকোর্ট তার জামিন নাকচ করেন।
১৮ মাস কারাবন্দি খালেদা জিয়া: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ১৮ মাস। ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর থেকে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারের ডে কেয়ার সেন্টারে শুরু হয় খালেদা জিয়ার কারাবাস। সেই থেকে পরিত্যক্ত ওই কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে দিন কাটছিল তার। কারাগারে নেয়ার পর শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
বিএনপির পক্ষ থেকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করে তার চিকিৎসার দাবি করা হলেও সরকারের তরফে বারবার তা নাকচ করা হয়। পরে কারা কর্তৃপক্ষ সরকারি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে। সে বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৮ই এপ্রিল তাকে কয়েক ঘণ্টার জন্য নেয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। কয়েকটি এক্সরে করিয়ে সেদিনই তাকে ফেরত নেয়া হয় কারাগারে। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে ৬ই অক্টোবর তাকে স্থানান্তর করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। সেবার তাকে গাড়ি থেকে নেমে হুইল চেয়ারে করেই নেয়া হয় ছয়তলার কেবিন ব্লকে। সেখানে ভর্তি করে তার চিকিৎসা চলে পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তাকে ফের ফিরিয়ে নেয়া হয় কারাগারে। নির্বাচনের পর কারাগারে তার শারীরিক পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটলে তাকে ফের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আনা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে কেবিন ব্লকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।