ডেস্ক: বাংলাদেশে ২০১৩ সালে ধসে পড়া পোশাক কারখানা রানা প্লাজার হতাহত শ্রমিকদের দায়ের করা একটি ক্ষতিপূরণ মামলা খারিজ করে দিয়েছে কানাডার সুপ্রিম কোর্ট। ২০০ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল কানাডার খুচরা পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান লবলজের বিরুদ্ধে। এ খবর দিয়েছে পোশাক ও ফ্যাশন বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম জাস্ট স্টাইল।
খবরে বলা হয়, চার বছর আগে লবলজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে আহত শ্রমিক ও নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা। বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ শিল্প কারখানা দুর্ঘটনা হিসেবে পরিচিত রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে প্রাণ হারান ১১৩০ জন। আহত হন ২৫২০ জন শ্রমিক। কারখানার দালানে গুরুতর কাঠামোগত ত্রুটি ছিল। কারখানার শ্রমিকরা জো ফ্রেশ অ্যাপারেল কানাডা সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কো¤পানির জন্য পোশাক তৈরি করছিল। জো ফ্রেশ অ্যাপারেলের মালিক লবলজ কো¤পানিজ লিমিটেড।
কানাডার অন্টারিও প্রদেশে দায়ের করা ওই মামলায় ব্যুরো ভেরাইটাসকেও আসামী করা হয়।
এই অডিট প্রতিষ্ঠানকে লবলজ ওই কারখানা দালানের অডিট কাজের দায়িত্ব দিয়েছিল।
আরতি রানি দাসের নেতৃত্বে বাংলাদেশী হতাহত শ্রমিক ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের আইনজীবীর যুক্তি ছিল, এসব শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য লবলজ আইনগতভাবে দায়ী। এই ভিকটিমদের পক্ষে ছিল টরেন্টোর আইনি প্রতিষ্ঠান রোচন জেনোভা। প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে বলেছে, যখন কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অবস্থিত কারখানা থেকে কাজ করায়, তখন তারা শ্রমিকদের অত্যন্ত নি¤œ মজুরির সুবিধা গ্রহণ করে। সুতরাং, তাদেরকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে সেসব কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা নিরাপদ। যদি তা নিশ্চিতে কেউ ব্যর্থ হয়, তাহলে ওই শ্রমিকদের কোনো ক্ষতি হলে তার দায় এই কো¤পানিগুলোকে নিতে হবে।
মামলায় দাবি করা হয়, লবলজ জানতো বাংলাদেশে পোশাক কারখানাগুলো খুবই অনিরাপদ। কিন্তু তা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত পরীক্ষা নীরিক্ষা ছাড়াই রানা প্লাজায় অবস্থিত কারখানা থেকে পোশাক বানানোর ফরমায়েশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে লবলজ ও ব্যুরো ভেরাইটাসের যুক্তি, এই মামলা সফল হওয়ার নয়। ২০১৭ সালেই অন্টারিও সুপেরিয়র কোর্টের বিচারপতি পল পিরেল এই মামলা খারিজ করে দিয়েছিলেন। এক বছর পর আপিলে সেই রায় বহাল রাখা হয়। রায়ে বলা হয়, বাদীদের দেখভাল করার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা বিবাদির ছিল না।
বিচারপতি বলেন, লবলজ বাংলাদেশের ওই বিপজ্জনক কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করেনি। সেখানকার পরিস্থিতির ওপর লবলজের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। রানা প্লাজার মালিক বা নিয়োগদাতা বা কর্মচারিদের ওপরও লবলজের কোনো এখতিয়ার ছিল না।
কিন্তু ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়। অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট মামলা খারিজ করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়েছে যে, এই ক্ষতিপূরণ দাবি বিবেচনার এখতিয়ার কানাডিয়ান আদালতের নেই। এসব ব্যাপারে বাংলাদেশের আইন বিবেচ্য। এছাড়া দাবির জন্য আবেদন করা হয়েছে অনেক পরে।
এছাড়া ২০১৬ সালে মার্কিন খুচরা পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট, জেসি পেনি ও চিলড্রেন’স প্লেসের বিরুদ্ধে একই ধরণের একটি মামলা খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল।