ঢাকা: র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, কাশ্মীর ইস্যু ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি না। এ নিয়ে বাংলাদেশে কেউ জলঘোলা করার চেষ্টা করলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক চুলও ছাড় দেয়া হবে না। আজ দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে ঈদ উপলক্ষে এলিট ফোর্স র্যাবের নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন বলেন।
র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, কাশ্মীর ইস্যু ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। আমাদের দেশে ‘আল্টা-ইসলামিস্টের’ সংখ্যা খুব বেশি নয়।
তারা ২৪ ঘণ্টাই আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। যে বিষয়টা আমাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, সে বিষয় নিয়ে কোনো সুস্থ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ আমার দেশে জলঘোলা করার কোনো কারণ দেখি না। যদি কেউ অন্য কোন উদ্দেশ্যে এই ইস্যুকে নিয়ে জলঘোলা করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, সামনেই আমাদের দু’টি বড় ইভেন্ট রয়েছে। একটি ঈদুল আজহা অন্যটি ১৫ আগস্ট। ঈগের আগে, ঈদের দিন ও ঈদ পরবর্তী নিরাপত্তার বিষয়ে র্যাবের পৃথক পরিকল্পনা রয়েছে। সে অনুযায়ী পুরো পরিকল্পনা বাস্তায়ন করা হচ্ছে। গরুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশজুড়ে র্যাব সদস্যরা কাজ করছেন। হাটে জাল টাকা ও অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা রোধে তারা তৎপর রয়েছেন। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রতিটি বাস-লঞ্চ টার্মিনাল ও ট্রেন স্টেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং করছে র্যাব। তবে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার জন্য এবার অনেক সড়ক ও রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে কারণে যান চলাচলে কোথাও কোথাও ধীরগতি রয়েছে। যতটুকু সম্ভব ঈদযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি আমরা।’
বেনজীর আহমেদ আরও বলেন, সারাদেশে মহাসড়কে ৪২টি দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা শনাক্ত করা হয়েছে। সেসব স্থানে যেন ফের দুর্ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আমাদের নজরদারি রয়েছে। তবে, এ বিষয়ে চালকদের ভূমিকার পাশাপাশি যাত্রীদেরও দায়িত্ব রয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় ঈদগাহসহ গুরুত্বপূর্ণ সব ঈদগাহের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং থাকছে। এছাড়া, ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে সুইপিং করা হবে। ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদের নামাজের জামাতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরে ৫৫০ টি গরুর হাট বসে। ঢাকায় প্রায় ৫০ হাজার পশু কোরবানি হয়। নগরবাসীর প্রতি আমার ব্যক্তিগত অনুরোধ যে, যেখানে-সেখানে কোরবানি করে শহর নোংরা করবেন না। সিটি করপোরেশনের ঠিক করে দেয়া নির্ধারিতস্থানে পশু কুরবানী করুন।
সম্প্রতি র্যাব-৭’র সাবেক অধিনায়ক (সিও) হাসিনুর রহমান নিখোঁজের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক মানুষকেই তো খুঁজে পাওয়া যায় না। খুঁজে না পাওয়াটা শুধু বাংলাদেশে নয়, আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপেও মানুষ নিখোঁজ হয়। একজনকে খুঁজে না পাওয়া মানেই কোনো বাহিনীর ব্যর্থতা নয়। নিখোঁজ হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত রয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এ নিয়ে কাজ করছি। যদি কারও কাছে কোনো তথ্য থাকে, তাহলে আমাদের জানাবেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। ডেঙ্গুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ডেঙ্গুর বিষয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন থাকলে চ্যালেঞ্জ কঠিন হবে না। সবাই নিজের বাড়ি ও এলাকা পরিস্কার রাখলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। র্যাবের প্রত্যেক ব্যটালিয়নে একজনকে ডেঙ্গুর বিষয়ে অ্যাসাইন করা হয়েছে। তিনি প্রতিদিন সার্বিক বিষয়গুলো মনিটরিং করছেন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এমন একজনকে দায়িত্ব দিয়ে মনিটরিং করলে বিষয়টা সহজ হয়ে যাবে। র্যাব দেশবাসীকে সচেতন করার জন্য সারাদেশে কাজ করছে। ঈদ ও ১৫ আগষ্ট উপলক্ষে দেশে কোন জঙ্গি হামলার আশংঙ্কা আছে কী-না অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, হলি আর্টিজানের পর জঙ্গিদের আমরা নেটওয়ার্ক চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছি। কোন থ্রেটকে আমরা উড়িয়ে দিই না। র্যাব সারাদেশে জননিরাপত্তা বিধানে সতর্ক অবস্থানে থাকবে। চামড়া পাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, যারা চামড়া ব্যবসায়ী তাদের আমরা অনুরোধ করবো যে, আপনারা দ্রুত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করুণ। চামড়া পাচার রোধে ঢাকাসহ সারাদেশে গোয়েন্দা নজরদারী গড়ে তোলা হবে।
সংবাদ’ সম্মেলনে এসময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল মো: তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার,অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডিআইজি জামিল আহমেদ, র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক লে.কর্নেল মাহাবুবুল আলম র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক লে.কর্নেল মো: ইমরানুল হাসান ও র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে.কর্নেল সারোয়ার বিন কাসেম ও র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী পরিচালক মেজর রইসুল আজম মনি ও এএসপি মিজানুর রহমান প্রমুখ।