গাজীপুর: গত ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিত গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন কাওরাইদ ইউপির উপ-নির্বাচনে কেন্দ্র লুটের প্রমান পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। তদন্তকালে ভোট গ্রহন প্রশাসন ও প্রতিদ্বন্ধিী প্রার্থী, সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষ্য গ্রহন করে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দায়িত্ব প্রাপ্ত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ঢাকা অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তা রাকীব উদ্দিন মন্ডল এই সত্যতা পান।
আজ বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শ্রীপুর উপজেলা পরিষদে এই তদন্ত হয়।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ১ আগষ্ট ২০১৯ তারিখের ১৭০০,০৭৯,৪১,০০৩,১৯-৫৯৫ নং পত্র বলে নির্বাচন কর্মকর্তা, ঢাকা অঞ্চল, ঢাকা তদন্তকারী এর স্বারক নং ১৭,০২,০০০০,০০০,২৭,০৩৩,১৭-৫৮৭ তারিখ ২৮/০৭/২০১৯ এর প্রেক্ষিতে এই তদন্ত হয়। তদন্তকালে উপ-নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তারা তাদের বক্তব্য দেন। প্রতিদ্বন্ধিী প্রার্থী, সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষ্য প্রমান গ্রহন করে লিপিবদ্ধ করা হয় তদন্তের সময়। এ সময় প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী কামরুল হাসান মন্ডল সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
তদন্তকালে অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত গাজীপুরে অবস্থানরত টেবিল ফ্যান প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী এ কে এম রিপন আনসারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তদন্ত কর্মকর্তা রাকীব উদ্দিন মন্ডল। অতঃপর জবানবন্ধীর ফরমে নিজের করা অভিযোগের স্বপক্ষে লিখিত বক্তব্য গাজীপুর জেলা নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট পৌছে দেন চেয়ারম্যান প্রার্থী এ কে এম রিপন আনসারী। তিনি জাল ও লুটকরা ভোট বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন দাবী করেন। একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবীও করেন তিনি।
প্রসঙ্গত: ২৫ জুলাই কাওরাইদ ইউপির উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন শুরুর একটু পরেই প্রতিটি কেন্দ্রে একটি করে বিশেষ টিম গিয়ে জাল ভোট মেরে চলে যায়। প্রতিটি কেন্দ্রে ১৫টি করে ব্যালট বই(১৫০০ ভোট) জোর পূর্বক প্রিজাইডিং অফিসারদের থেকে নিয়ে সিল মারে বিশেষ টিম। বিশেষ টিমে পুলিশ ও সন্ত্রাসী ছিল। বিশেষ টিম কেন্দ্র প্রশাসনকে জিম্মি করে নতুন স্টাইলে জাল ভোট মেরে নির্বাচনকে কলংকিত করে। বিশেষ টিমের অভিযান দেখে ভোটাররা আর কেন্দ্রে আসেননি। বিশেষ টিমের সিল মারার সময় বলদীঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভ্রাম্যমান আদালত ৫জনকে জাল ভোট দেয়ার সময় হাতেনাতে আটক করলেও ১জনকে আদালতে পাঠায়। বিশেষ টিমগুলোর ব্যবহৃত একই ধরণের হাইয়েস গাড়িগুলোর সামনে মোবাইল টিমের বিভিন্ন নম্বর দেয়া ছিল।
এই অবস্থায় ভোট লুট হওয়ার পর বেলা দেড়টায় নির্বাচন বর্জন করেন টেবিল ফ্যান প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী এ কে এম রিপন আনসারী। অতঃপর উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন পূর্বক তিনি প্রিজাইডিং অফিসার ও রিটার্নিং অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকটও একটি অভিযোগ দেন। এই তদন্তের পর প্রতিকার না পেলে ঈদের ছুটি শেষে তিনি উচ্চ আদালতে একটি রীট মামলার করবেন বলেও জানান এ কে এম রিপন আনসারী।
প্রসঙ্গত: উল্লিখিত উপ-নির্বাচনে নিজের কেন্দ্র সহ সকল কেন্দ্র লুট করে জাল ভোট দেয়া হয় নৌকা প্রতীকে। জাল ভোট দেয়ার সময় লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও লাঠিচার্জ করে তাড়িয়ে কেন্দ্রে থেকে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদৈর পোলিং এজেন্টও বের করে দেয়া হয়। এই কাজে পুলিশের সঙ্গে একদল অপরিচিত সন্ত্রাসী বিশেষ অভিযানে অংশ গ্রহন করে। অপরিচিতদের মধ্যে অধিকাংশই পার্শবর্তি একটি ইউনিয়নের লোক। বহিরাগতলোকদের নেতৃত্বে ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা ও ছাত্র সংগঠনের কতিপয় নেতা।