সিলেটে অনেকটা অগোছালো বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে যেকোন মুহূর্তে সিলেট বিএনপির জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হতে পারে। এছাড়া দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনেক প্রার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ সিলেট জেলা কিংবা মহানগর বিএনপির বিভিন্ন বিষয়ে দলের হাইকমাণ্ডের হস্তক্ষেপেও যেনো ছন্নছাড়া সিলেট বিএনপিকে সক্রিয় করা যাচ্ছে না।
কেন্দ্রঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচিতেও সিলেট বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি অনেকটা দায়সারা ধরণের আর ‘ফটোসেশনে’ সীমাবদ্ধ।
তাছাড়া সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির অনেক নেতাকর্মীই দল ছেড়ে অন্য দলে যোগদান করছেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। এমতাবস্থায় অনেকটা অগোছালো আর ছন্নছাড়া সিলেট বিএনপি।
সিলেট মহানগর বিএনপি দলীয় কর্মসূচী পালনেও অনেকটা ‘নিস্ক্রিয়’।
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জমান সেলিম দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। এছাড়াও মহানগরের অনেক নেতাকর্মীই মামলার জালে আটকা পড়ে অনেকটা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। রাজপথে নেতাকর্মীদের দেখা মিলে না বললেই চলে। তবে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতা দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে সিলেট মহানগর বিএনপিকে চাঙা করতে কাজ করে যাচ্ছেন- বিএনপি সূত্রে এমনটি জানা গেছে।
সিলেট মহানগর বিএনপির বর্তমান কার্যক্রম জানতে মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেকের মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে, সিলেট বিএনপির জেলা কমিটির প্রায় একই অবস্থা। জেলা কমিটিকে পূনর্গঠিত করার লক্ষ্যে বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হতে পারে যেকোন সময়। নতুন কমিটি গঠনের আগে হচ্ছে আহবায়ক কমিটি। বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুই ধফায় সিলেট জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে কথা বলছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন, নিরপেক্ষ নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে সোচ্চার হওয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দলকে সংগঠিত ও সক্রিয় করা এবং সকল মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তারেক। সিলেটে কিভাবে বিএনপিকে গতিশীল করা যাবে, কোন প্রক্রিয়ায় সকল ইউনিটের কমিটি গঠন করা হবে এসব উল্লেখ করে একটি কর্মপরিকল্পনা দেয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
তাছাড়া, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা) পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের বহিষ্কৃত ৩২ জন নেতাকর্মীর মধ্যে ১৪ জনের বহিষ্কাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। সিলেটে বিএনপিকে গতিশীল করতেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবরে আবেদনের প্রক্ষিতে এসকল নেতৃবৃন্দের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
এতকিছুর পরও সিলেটে ‘নিষ্ক্রীয়’ বিএনপি। তবে, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ একথা মানতে নারাজ। তিনি জানান, সারাদেশের অন্যান্য ইউনিটের তুলনায় সিলেটে পুরোপুরি সক্রিয় বিএনপি। কেন্দ্রঘোষিত সকল কর্মসূচী সিলেট জেলা বিএনপি পালন করে থাকে এবং সেখানে উল্লেখজনক নেতাকর্মী উপস্থিত থাকেন।
তিনি আরো জানান, তারেক রহমানের সাথে আমাদের দুই ধফায় কথা হয়েছে। সংগঠনকে গতিশীল করতে যাচাই বাছাই শেষে একটি নতুন আহবায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করা হতে পারে যেকোন সময়। তবে তিনি জানান, তারেক রহমানের নির্দেশের পর সিলেট জেলা বিএনপির কার্যক্রমে অনেকটা চাঙা ভাব। তিনি আরও জানান, সিলেট জেলা বিএনপির কর্মপরিকল্পনার একটি রূপরেখা গত ১৫ মে তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সিলেটের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সিলেটের শমসের মবিন চৌধুরীর দল ত্যাগ এবং দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান সিলেটের ইনাম আহমেদ চৌধুরী গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর দল ত্যাগের কারণে সিলেটের বিএনপির কার্যক্রম অনেকটা অগোছালো হয়ে পড়েছে। তাছাড়া নেতাকর্মীদের উপর মামলার খড়গ ও দীর্ঘদিন ধরে দল ক্ষমতার বাইরে থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।